সুইস ব্যাংক থেকে নজিরবিহীন গতিতে টাকা তুলছে বাংলাদেশিরা
নিজস্ব প্রতিবেদক: Kanak Sarwarপ্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২০ জুন, ২০২৪ এ ১২:৩২ PM

আমানত সাড়ে ৫ কোটি সুইস ফ্রাঁ থেকে কমে হয়েছে ১ কোটি ৮০ লাখ ফ্রাঁ
সুইজারল্যান্ডের ব্যাংক থেকে বাংলাদেশিদের অর্থ তুলে নেওয়ার হার গত কয়েক বছর ধরে বাড়ছে। গত বছর সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের আমানতের পরিমাণ সাড়ে ৫ কোটি সুইস ফ্রাঁ থেকে কমে ১ কোটি ৮০ লাখ ফ্রাঁ হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২০ জুন) সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের (এসএনবি) প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদনে এই তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। খবর দ্য ফাইনান্সিয়াল এক্সপ্রেসের।
দেশটির ব্যাংকগুলো থেকে বাংলাদেশিদের অর্থ তুলে নেওয়ার এই গতিকে তীব্র বলা হচ্ছে। এর আগে, এসএনবির ২০২২ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২১ সালেও সুইস ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের আমানতের পরিমাণ ছিল ৮৭ কোটি ১১ লাখ সুইস ফ্রাঁ। কিন্তু পরের বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে তা কমে ৫ কোটি ৫০ লাখ ফ্রাঁতে দাঁড়ায়।
প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০২১ সালে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমা রাখা অর্থের পরিমাণ ৮৭২ মিলিয়ন সুইস ফ্রাঁতে পৌঁছায়। যা দেশটির ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ পরিমাণ অর্থ জমা।

তবে ২০২০ সালে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের জমা অর্থের পরিমাণ তার আগের বছরের তুলনায় কম ছিল। ওই বছর সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের গচ্ছিত অর্থের পরিমাণ ছিল ৫৬ কোটি ৩০ লাখ সুইস ফ্রাঁ; যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৫ হাজার ২০৩ কোটি টাকার বেশি।
তার আগের বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালে দেশটির বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমা করা অর্থের পরিমাণ ছিল ৬০ কোটি ৩০ লাখ ফ্রাঁ। ২০১৮ সালে এই অর্থের পরিমাণ ছিল ৬২ কোটি সুইস ফ্রাঁ। আর ২০১৭ সালে এর পরিমাণ ছিল ৬৬ কোটি ১৯ লাখ সুইস ফ্রাঁ।
এদিকে, বাংলাদেশের প্রতিবেশী ভারতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও নাগরিকের সুইস ব্যাংকে অর্থ আমানতের হার ২০২৩ সালে প্রায় ৭০ শতাংশ কমেছে। গত চার বছরের মধ্যে ভারতীয়দের আমানতের পরিমাণ সর্বনিম্নে পৌঁছেছে ২০২৩ সালে।
তবে সুইস ব্যাংকে বিদেশি গ্রাহকদের অর্থ জমার তালিকায় শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাজ্য। সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে ব্রিটিশ নাগরিকদের ২৫৪ বিলিয়ন সুইস ফ্রাঁ রয়েছে। এরপরই ৭১ বিলিয়ন সুইস ফ্রাঁ নিয়ে তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
আর ফ্রান্স রয়েছে এই তালিকার তৃতীয় স্থানে। সুইস ব্যাংকে দেশটির নাগরিকদের প্রায় ৬৪ বিলিয়ন ফ্রাঁ রয়েছে। ওই তিন দেশের পর শীর্ষ দশ দেশের তালিকায় আছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, জার্মানি, হংকং, সিঙ্গাপুর, লুক্সেমবার্গ এবং গার্নসি।
আমানত হ্রাস পাওয়ার পরও সুইস ব্যাংকে ভারতীয়দের অর্থের পরিমাণ ১ দশমিক ০৪ বিলিয়ন সুইস ফ্রাঁতে দাঁড়িয়েছে; যা ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৯ হাজার ৭৭১ কোটি রুপি। এ নিয়ে সুইস ব্যাংকে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ও নাগরিকদের আমানত টানা দ্বিতীয়বারের মতো কমেছে।
সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের ‘মোট দায়ের’ মধ্যে ব্যক্তিগত, ব্যাংক এবং অন্যান্য উদ্যোগের আমানতসহ সব ধরনের তহবিল অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের হাজার হাজার মানুষ সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বৈধ-অবৈধ পথে উপার্জিত অর্থ গচ্ছিত রাখেন। দেশটির কঠোর গোপনীয় ব্যাংকিং নীতির কারণে সারা দুনিয়ার মানুষ সেখানে অর্থ জমা রাখেন।
সুইজারল্যান্ডের আইনে গ্রাহকদের গোপনীয়তা দৃঢ়ভাবে রক্ষার নিয়ম রয়েছে। এ আইনের ফলে দেশটির ব্যাংকগুলো কোনো পরিস্থিতিতেই গ্রাহকদের তথ্য কারও কাছে প্রকাশে বাধ্য নয়।
ফলে কারা, কেন অথবা কীভাবে অর্থ ব্যাংকে রাখছেন, সে সম্পর্কে ব্যাংকগুলো কাউকে কোনো তথ্য দেয় না। তবে সম্প্রতি গোপনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় ও সমালোচনা দেখা দেওয়ায় অনেকে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংক থেকে বিশ্বের অন্যান্য দেশে তাদের অর্থ সরিয়ে নিচ্ছেন।
Related News

জলবায়ু তহবিল বাংলাদেশের ওপর ঋণের বোঝা বাড়াচ্ছে: টিআইবি
গত এক দশকে সবুজ জলবায়ু তহবিলের (গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড - জিএসএফ) ভূমিকা বেশ হতাশাজনক। অনুদানের বিপরীতে অধিক পরিমাণ ঋণ প্রদানের জন্য বাংলাদেশের মতো জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত দেশের ওপর ঋণ পরিশোধের বোঝা বাড়ছে।
মঙ্গলবার (১৪ মে) ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের ‘সবুজ জলবায়ু তহবিলে বাংলাদেশের মতো ঝুঁকিপূর্ণ দেশের অভিগম্যতা : সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
রাজধানীর ধানমন্ডিতে অবস্থিত টিআইবি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, জিএসএফে জবাবদিহিতা করার মতো অবকাঠামো নেই। নিজস্ব নীতিমালা লঙ্ঘন ও বৈষম্যমূলক আচরণ করছে প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগও রয়েছে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, বাংলাদেশর যে পরিমাণ অর্থ প্রয়োজন, জিএসএফের মাধ্যমে তার সিংহভাগ আসার কথা। জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো কোনো সুফল পাচ্ছে না। বরং তারা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছে অর্থায়ন বেশি করছে। যা একদমই গ্রহণযোগ্য নয়।
এদিন সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির গবেষক নেওয়াজুল মাওলা ও সহিদুল ইসলাম গবেষণার ফলাফল তুলে ধেরেন। গবেষণায় জানানো হয়, জিএসএফের ঋণের অর্থ বিদেশি মুদ্রায় সুদসহ ফেরত দিতে হয়। এতে ঋণগ্রহীতা দেশগুলোর বহিস্থ ঋণের চাপ বাড়ে। এ কারণে স্থানীয় মুদ্রার ওপর চাপ সৃষ্টিসহ জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক কি কোনো নিষিদ্ধ পল্লী, প্রশ্ন গয়েশ্বর রায়ের
বাংলাদেশ ব্যাংকে কেন সাংবাদিকেরা যেতে পারবেন না, সে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তার প্রশ্ন, বাংলাদেশ ব্যাংক কি কোনো নিষিদ্ধ পল্লী যে সাংবাদিকেরা ঢুকতে পারবেন না? এখন সাংবাদিকদেরই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তারা সেখানে ঢুকবেন কি ঢুকবেন না।
শনিবার নয়াপল্টনের একটি রেস্তোরাঁয় জিয়া মঞ্চের ঢাকা বিভাগীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এ প্রশ্ন তোলেন।
গয়েশ্বর রায় বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মতো টাকা লুট করে পাচার করছে। এ জন্য সাংবাদিকেরা সেখানে ঢুকতে পারছেন না। তিনি বলেন, গণমাধ্যমকর্মীরা চাকরি হারানোর ভয়ে আছেন। তাই অনেক সত্য অপ্রকাশিত থাকছে। দেশের অর্থনীতি যে অবস্থায় দাঁড়িয়েছে, কয়দিন পর মানুষ টের পাবে। কোষাগার খালি, ডলারের অভাবে ব্যবসায়ীরা এলসি খুলতে পারছেন না। শিল্পকারখানা বন্ধ হতে বসেছে। চাকরির বাজারে হাহাকার।
ভারতীয় পণ্য বর্জনের প্রসঙ্গ তুলে বিএনপির এই নেতা বলেন, ভারতের পণ্য বয়কটের কথা বলব না। তবে আগে নিজেদের স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করতে হবে ভারতের পণ্য ক্রয় করার আগে। কেননা, তাদের ৫২৭টি পণ্য ইউরোপ নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। পাশাপাশি দেশের জন্য ক্ষতিকর আওয়ামী লীগকেও বর্জন করতে হবে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সমালোচনা করে গয়েশ্বর রায় বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় ওবায়দুল কাদেররা কোথায় ছিলেন। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগে মুক্তিযোদ্ধা নেই, সেটা বলা যাবে না। তবে যারা আছেন, সবাই প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আওয়ামী লীগ ফেরিওয়ালার মতো বিক্রি করছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালামের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক–বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী, সহসাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান, জিয়া মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক ফয়েজুল্লা ইকবাল, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবু তালেব প্রমুখ।

রাষ্ট্রায়ত্ত প্রধান চার ব্যাংকের রেমিট্যান্সের বাজারে ধ্বস
রেমিট্যান্স বাজারে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর এক-চতুর্থাংশের বেশি নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে।সে বাজার হাতছাড়া হতে হতে এখন ১০ শতাংশের ঘরে নেমে এসেছে। সোনালী, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স প্রবাহের অবস্থা একেবারেই নাজুক। তুলনামূলক ভালো অবস্থানে আছে কেবল জনতা ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গত পাঁচ বছরের রেমিট্যান্স প্রবাহের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০২০ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ৫৫৮ কোটি ৮২ লাখ ডলার, যা ছিল মোট রেমিট্যান্সের ২৫ দশমিক ৭০ শতাংশ। এর পর থেকে এ অংশীদারত্ব ক্রমেই কমেছে। ২০২১ সালে ২২ দশমিক শূন্য ৩, ২০২২ সালে ১৭ দশমিক ১১ শতাংশ রেমিট্যান্স দেশে আনে রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক। ২০২৩ সালে এ অংশীদারত্ব মাত্র ১২ দশমিক ১৭ শতাংশে নেমে আসে। চলতি বছরের প্রথম চার মাসে রেমিট্যান্সের মাত্র ১০ দশমিক ৪৭ শতাংশ এসেছে রাষ্ট্রায়ত্ত এসব ব্যাংকের মাধ্যমে।

ডলারের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঘোষিত দরে রেমিট্যান্স আনতে গিয়ে এ বিপর্যয় ঘটেছে বলে দাবি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের। যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তাদের ভাষ্যমতে, প্রতিযোগিতামূলক মনোভাবের অভাবেই ব্যাংকগুলো রেমিট্যান্সের বাজারে তাদের অবস্থান হারিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তার বক্তব্য হলো রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের কর্মকর্তারা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ঘোষিত দরে ডলার পাওয়ার আশায় বসে ছিলেন। এ কারণে তারা রেমিট্যান্সের বাজার হারিয়েছেন। রেমিট্যান্স আনার ক্ষেত্রে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা ছিল। কিন্তু রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রতিযোগী মনোভাবের ছিটেফোঁটাও ছিল না।
সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে ২০২০ পঞ্জিকাবর্ষে দেশে মোট রেমিট্যান্স এসেছিল ১৪৩ কোটি ৭৫ লাখ ডলার। অর্থাৎ ওই বছর ব্যাংকটির মাধ্যমে প্রতি মাসে গড়ে রেমিট্যান্স এসেছিল প্রায় ১২ কোটি ডলার। এর পর থেকে ব্যাংকটির মাধ্যমে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমতে থাকে। ২০২১ সালে ১ হাজার ৪০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স আসার পর ২০২২ সালে তা ১০৮ কোটিতে নেমে আসে। ২০২৩ সালে তা আরো কমে নেমে আসে মাত্র ৫৮ কোটি ডলারে। আর চলতি ২০২৪ সালের প্রথম চার মাসে (জানুয়ারি-এপ্রিল) মোট ১০ কোটি ৪৭ লাখ ডলার রেমিট্যান্স আনতে পেরেছে ব্যাংকটি। সে অনুযায়ী ব্যাংকটির মাধ্যমে এখন প্রতি মাসে গড়ে রেমিট্যান্স আসছে মাত্র ২ কোটি ৬১ লাখ ডলার। মাসভিত্তিক গড় বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২০ সালের তুলনায় ব্যাংকটিতে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে ৭৮ শতাংশের বেশি।

বাংলাদেশের শ্রমবাজারে অশনি সঙ্কেত
মধ্যপ্রাচ্য ও আসিয়ানভুক্ত কয়েকটি দেশে হঠাৎ করে কর্মী যাওয়ার হার কমে যাওয়ায় বৈদেশিক শ্রমবাজারকে ‘অশনি সঙ্কেত’ হিসাবে দেখছেন এই পেশার সাথে সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক ও বিশ্লেষকরা।
ইতোমধ্যে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ শ্রমবাজারগুলোর মধ্যে ওমান এখনো বন্ধ হয়ে আছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত ও দুবাইয়ে কর্মসংস্থান ভিসায় কর্মী যাওয়া বন্ধ হওয়ার কারণে দিন দিন কমছে বিদেশ গমনে ইচ্ছুকদের হার। এর সাথে নতুন করে মালয়েশিয়া সরকারের ইচ্ছানুযায়ী বাংলাদেশসহ বিদেশী শ্রমিকদের নামে কোটা দেয়া বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হওয়ায় বাংলাদেশের দ্বিতীয় ও সম্ভাবনাময় শ্রমবাজারটি অনেক হুমকির মুখে পড়েছে। আগামী ৩১ মে এর মধ্যে বর্তমান কোটার আওতায় মালয়েশিয়াগামী কর্মীদের প্রবেশের উপর যে বাধ্যবাধকতা রয়েছে সেটি জানিয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে জরুরি বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে।
জনস্বার্থে প্রকাশিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মালয়েশিয়ান সরকার বাংলাদেশসহ ১৪টি কর্মী প্রেরণকারী দেশ থেকে আগামী ৩১ মে এর মধ্যে মালয়েশিয়ায় প্রবেশের বাধ্যবাধকতা আরোপ করেছে। এ অবস্থায় মালয়েশিয়াগামী শ্রমিকদেরকে মালয়েশিয়া সরকার কর্তৃক প্রদত্ত ই ভিসা, জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর বহির্গমন ছাড়পত্র এবং এয়ারলাইন্সের ভ্রমণের টিকিটসহ সব ডকুমেন্টের সঠিকতা যাচাই-বাছাই পূর্বক মালয়েশিয়ায় যাওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
গতকাল জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, ২০২৪ সালের বিদেশগামীদের পরিসংখ্যানে জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তথ্য দেয়া আছে। নিয়ম অনুযায়ী এপ্রিল মাসের বিদেশগামীদের পরিসংখ্যানও স্ক্রিনে দেয়ার কথা। কিন্তু গতকাল মে মাসের ১২ তারিখ অতিবাহিত হলেও সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে এই তথ্যের আপডেট পাওয়া যায়নি। তাই গতকাল পর্যন্ত কত শ্রমিক বিদেশে গিয়েছেন তা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ফোন করেও পাওয়া যায়নি। জানুয়ারি থেকে মার্চ ২০২৪, পর্যন্ত বিদেশে কর্মী গিয়েছে ২ লাখ ৩৬ হাজার ৮৩৭ জন। অথচ ২০২৩ সালের এই সময়ে বাংলাদেশ থেকে ৩ লাখ ২৫ হাজারের মতো কর্মী বিদেশে গেছে এবং বছর শেষে রেকর্ড পরিমাণ ১৩ লাখেরও বেশি কর্মী পাড়ি জমিয়েছিলেন।
গত বছরের তুলনায় চলতি বছর বাংলাদেশের ৩টি গুরুত্বপূর্ণ শ্রমবাজারের উপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। এর মধ্যে ওমানে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে শুধু ৩০০ শ্রমিক যাওয়ার পর আর কোনো শ্রমিক যায়নি। ওমানের ঢাকার দূতাবাস বাংলাদেশ থেকে আপাতত শ্রমিক না নেয়ার ঘোষণার কথা সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছিল। এর পর থেকে দেশটিতে কর্মী যাওয়া সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে আছে। অথচ ২০২৩ সালে ওই দেশে ১ লাখ ২৭ হাজারের বেশি কর্মী পাড়ি জমিয়েছিলেন।
শুধু ওমান নয় মধ্যপ্রাচ্যর আরেক গুরুত্বপূর্ণ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাত ও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
২০২৩ সালে দেশটিতে ৯৮ হাজার ৪২২ জন শ্রমিক পাড়ি জমানোর তথ্য পরিসংখ্যানে উল্লেখ রয়েছে। আর চলতি বছরের প্রথম ৩ মাসে সেখানে গিয়েছে ২২ হাজার ৭৬০ জন। অথচ গত বছরের এই সময়ে ২৭ হাজারের বেশি কর্মী গিয়েছিল।
বর্তমানে দেশটিতে কর্মসংস্থান ভিসায় কর্মী যাওয়ার হার অনেক কমেছে। অথচ এই শ্রমবাজারে ভিজিট ভিসায় দুই লাখ কর্মী পাড়ি দিয়েছিল বলে বিএমইটির পরিসংখ্যানের হিসাবে রয়েছে। ওমান আর দুবাই নয় গুরুত্বপূর্ণ আরেক শ্রমবাজার মালয়েশিয়া সরকারও নতুন কোটা দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে গুরুত্বপূর্ণ ৩ শ্রমবাজারে শ্রমিক যাওয়ার হার তুলনামূলক অনেক কমেছে। ২০২৩ সালে এই তিন শ্রমবাজারে ৬ লাখের মতো কর্মী গিয়েছিল। এবারের হিসাব একেবারে ভিন্ন।
যদিও প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় চলতি বছর ১৫ লাখ কর্মী যাওয়ার টার্গেট নির্ধারণ করেছে। জনশক্তি ব্যবসায়ীরা বলছেন, গতানুগতিক শ্রমবাজার মালয়েশিয়া,ওমান ও দুবাইয়ে এ বছর কর্মী কম যাওয়ায় আমরা শঙ্কিত। নতুন শ্রমবাজারে লোক পাঠাবো, সেখানেও নানা আইনি বাধ্যবাধকতা। তাহলে আমরা কোথায় ব্যবসা করবো? ব্যবসা নেই আমাদের। লিবিয়ার মার্কেটও জটিলতায় আছে। আসলে এখন এই সেক্টরে অশনি সঙ্কেত দেখতে পাচ্ছি।
এক প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, স্মার্ট কার্ড দেয়া নিয়ে বিএমইটিতে ঘুষ লেনদেন বেশি হচ্ছে। সেখানে মনিটরিং বাড়ালে বিদেশে শ্রমিক যাওয়ার গতি বাড়বে কমবে অভিবাসন ব্যয়ও। একই সাথে বিদেশের বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোকে নতুন শ্রমবাজার খুঁজতে আরো বেশি তৎপর হওয়ার অনুরোধ তাদের।
