শান্তিরক্ষা মিশনে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের অংশগ্রহণ চায়না যুক্তরাষ্ট্র-স্টেট ডিপার্টমেন্ট
নিজস্ব প্রতিবেদক: Kanak Sarwarপ্রকাশ: বুধবার, ২৯ মে, ২০২৪ এ ১০:২০ AM

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার কেন্দ্রবিন্দুতে দুর্নীতি দমন: মদদদাতা বাংলাদেশ সরকারের শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া প্রসঙ্গে
বিশ্বব্যাপী শান্তিরক্ষা কার্যক্রম আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার উন্নয়নে অবদান রাখে। মানবাধিকার সুরক্ষায় শান্তিরক্ষী কর্মীদের ভূমিকাও জরুরি।
মঙ্গলবার স্টেট ডিপার্টমেন্টের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দেবার পরও জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে ডেথ স্কোয়াড ব়্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (ব়্যাব) এর সদস্যদের বাংলাদেশে থেকে নিয়োগ দেওয়া অব্যাহত রাখা প্রসঙ্গে করা এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার।
সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ ও পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদকে ব্যাপক দুর্নীতির সুযোগ করে দেওয়ার মূল হোতা ক্ষমতাসীন সরকারের শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র কোনো পদক্ষেপ নিবে কীনা জানতে চাইলে, বাইডেন প্রশাসনের এই কর্মকর্তা বলেন, দুর্নীতি দমনে যুক্তরাষ্ট্রের বিশদ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অংশ হিসাবে শীর্ষ পর্যায়ের কিছু কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এবং দুর্নীতি দমনকে রাখা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার মূল কেন্দ্রবিন্দুতে। নিষেধাজ্ঞা আরোপের আগে যুক্তরাষ্ট্র এ বিষয়ে কোনো আগাম ঘোষণা দেয়না।
ব্রিফিংয়ে শুরুতে চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত ব়্যাব এর সদস্যদের জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োগ দেওয়া অব্যাহত রাখা প্রসঙ্গে ডয়চে ভেলে, সাডেচ সায়েতিং এবং নেত্র নিউজের রিপোর্টের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে স্টেট ডিপার্টমেন্ট করেসপন্ডেন্ট মুশফিকুল ফজল আনসারী জানতে চান, "জার্মান এবং সুইডেন ভিত্তিক গণমাধ্যম ডয়চে ভেলে, সাডেচ সায়েতিং এবং নেত্র নিউজ এর যৌথ অনুসন্ধানী রিপোর্টে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ডেথ স্কোয়াড ব়্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (ব়্যাব) এর বর্তমান এবং সাবেক সদস্যরা নিয়মিতভাবেই জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োগ পাচ্ছে। চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে যুক্তরাষ্ট্র যেখানে ব়্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সেই প্রেক্ষাপটে এই বাহিনীর সদস্যদের যেভাবে শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োগ দেওয়া অব্যাহত রয়েছে, সে বিষয়ে আপনারা কতটা উদ্বিগ্ন? কারণ যুক্তরাষ্ট্র তার দেশের জনগণের ট্যাক্সের আয় থেকে শান্তিরক্ষা বাহিনীর মোট খরচের প্রায় ২৭ শতাংশ যোগান দিচ্ছে।"
জবাবে মিলার বলেন, "এই রিপোর্টগুলো সম্পর্কে আমরা অবগত। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শান্তি এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতে শান্তিরক্ষা মিশন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে। জাতিসংঘের যে যথাযথ নীতিমালা রয়েছে সেটা মেনে শান্তিরক্ষা মিশনে যারা নিয়োগ পাবে তারা যেনো মানবাধিকারের সুরক্ষার পক্ষে থাকে তা নিশ্চিত করাটা জরুরি।"
জাতিসংঘের এসংক্রান্ত নীতিমালা অনুসারে সংস্থাটি চায় শান্তিরক্ষা মিশনে যেসব দেশ তাদের পুলিশ এবং সেনা সদস্যদের নিয়োগ দিবে, নিয়োগকৃতরা মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় জড়িত নয়, বলে মন্তব্য করেন এই মুখপাত্র।
অপর এক প্রশ্নে দুর্নীতির অভিযোগে ব্যাপক আলোচিত সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ ও পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদ এর কথা উল্লেখ করে এই প্রতিবেদক জানতে চান, "বাংলাদেশের সদ্য বিদায়ী পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদের ব্যাপক দুর্নীতির বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ২ ধাপে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের কোনো এজেন্সি কী যুক্তরাষ্ট্র কিংবা অন্য কোনো দেশে এই পুলিশ প্রধানের কোনো সম্পদের খোঁজ পেয়েছে কীনা? যদি তার সম্পদের কোনো খোঁজ পাওয়া যায় তাহলে যুক্তরাষ্ট্র কী সেগুলো জব্দ করেছে? একইভাবে, বাংলাদেশের আরেক দুর্নীতিবাজ সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের বিদেশে সম্পদের কোনো তথ্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছে রয়েছে কীনা? অতি সম্প্রতি আপনারা তার ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন।
আপনারা কী বর্তমান সরকারের শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের পদক্ষেপ নিবেন কীনা? কারণ ক্ষমতাসীন শীর্ষ নেতৃত্বের কাছ থেকেই এই দুই কর্মকর্তা অবাধে যা কিছু করতে মন চায় তা করার স্বাধীনতা পেয়েছেন। তারা যা করতে (দুর্নীতি) চেয়েছেন তা করেছেন কিংবা বলতে পারেন সবকিছুই করেছেন।"
জবাবে মিলার বলেন, "আপনার প্রথম প্রশ্ন প্রসঙ্গে বলছি, আমার কাছে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে বলার মতো মতো কিছু নেই। দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে, যেসব অভিযোগ এবং মিডিয়া রিপোর্টের তথ্যসমূহ আপনি এখানে তুলে ধরেছেন আমরা সে বিষয়ে অবগত।"
দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থানের কথা তুলে ধরে এই মুখপাত্র বলেন, "একটা বিষয়ে আমাদের অবস্থান খুব স্পষ্ট। আমরা বিশ্বাস করি যে দুর্নীতির কারণে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ব্যাহত হয়, উন্নয়ন বাধাগ্রস্থ হয়, স্থিতিশীলতা ব্যহত হয় এবং গণতন্ত্র খর্ব হয়।"
যুক্তরাষ্ট্র দুর্নীতি বিরোধী পদক্ষেপ প্রসঙ্গে স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রধান মুখপাত্র মিলার বলেন, "আমরা দুর্নীতি দমনকে জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থের মূল কেন্দ্রবিন্দুতে রেখেছি। বিশদ এই নীতির পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অংশ হিসাবে শীর্ষ পর্যায়ের কিছু কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কিন্তু এ নিয়ে এখন ঘোষণা করার মতো কিছু নেই। কারণ আপনি জানেন যে, নিষেধাজ্ঞা দেয়ার আগে আমরা আগাম ঘোষণা করিনা।"
Related News

বাংলাদেশের মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী কর্মকর্তারা যখন জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী
বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কা নির্যাতন ও হত্যার সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে পাঠিয়েছে৷ ডিডাব্লিউ, নেত্র নিউজ এবং স্যুডডয়চে সাইটুং এর অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এই তথ্য৷ জাতিসংঘ দৃশ্যত বিষয়টি উপেক্ষা করছে৷
প্রথমবার দেখলে এটিকে এক নিরীহ ছবি মনে হবে: ২০২২ সালের এক রৌদ্রজ্জ্বল দিনে এক ডজন নারী ও পুরুষ একত্র হয়ে সেলফির জন্য পোজ দিয়েছেন৷ তাদের সবার পরনে সামরিক পোশাক - তাদের ব্যাজ তাদের মিশরীয়, ইন্দোনেশীয় ও বাংলাদেশি কর্মকর্তা হিসেবে তুলে ধরছে৷ তাদের একজন জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীর হালকা নীল বিশেষ টুপি পরে আছেন৷ দলটি গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রী কঙ্গোতে জাতিসংঘের মনুস্কো মিশনে তাদের মেয়াদের জন্য সদ্যই ইন্ডাকশন কোর্স সম্পন্ন করেছে৷
নিরীহই বটে, তবে ছবির মাঝখানে থাকা চশমা পরা টাক মাথার মানুষটির ক্ষেত্রে বিষয়টি একটু ভিন্ন৷ তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে এক সামরিক সূত্র ছবিটি সংগ্রহ করে ডিডাব্লিউ, সুইডেনভিত্তিক অনুসন্ধানী সংবাদমাধ্যম নেত্র নিউজ এবং জার্মান সংবাদপত্র স্যুডডয়চে সাইটুংকে দিয়েছে৷
জাতিসংঘের মিশনে মোতায়েনের আগে তিনি বাংলাদেশের অভিজাত বাহিনী ব়্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন বা ব়্যাব এর ইন্টেলিজেন্স উইংয়ের উপপরিচালক ছিলেন৷
মূলত বাংলাদেশ পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে ২০০৪ সালে জঙ্গিবাদ এবং সহিংস অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াই করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যদের সহায়তায় বাহিনীটি গড়ে তোলা হয়৷ কিন্তু বর্বর কার্যকর পদ্ধতি অনুসরণ করার কারণে এটি দ্রুতই বিস্তৃত মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্ত হয়৷ ফলে এই বাহিনীকে একসময় সহায়তা করা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০২১ সালে সেটির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে৷
গত বছর প্রকাশিত এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে ডিডাব্লিউ এবং নেত্র নিউজ উন্মোচন করে যে ব়্যাব নির্যাতন, হত্যা এবং অপহরণের সঙ্গে যুক্ত এবং এসব অপরাধ ঢাকতে বাহিনীটি অনেককিছু করে৷ তাদের টার্গেট: সন্দেহভাজন অপরাধী, বিরোধী দলীয় কর্মী, এবং মানবাধিকার রক্ষকরা৷
ব়্যাবের সদস্যরা আপাতদৃষ্টিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক পর্যায়ের সহায়তায় তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে বলে জানিয়েছেন দুইজন হুইসেলব্লোয়ার৷ সরকার অবশ্য এই অভিযোগ ‘‘ভিত্তিহীন এবং অসত্য’’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে৷
ব়্যাব সদস্যরা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে
সেই উন্মোচনের এক বছর পর ডিডাব্লিউ, নেত্র নিউজ এবং স্যুডডয়চে সাইটুংয়ের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে যে কুখ্যাত বাহিনীটির সদস্যদের আপাতদৃষ্টিতে শান্তিরক্ষা মিশনে পাঠানো হচ্ছে: এবং একটু আগে উল্লেখ করা ইন্টেলিজেন্স উইংয়ের উপপ্রধানই একমাত্র ব্যক্তি নন যাকে বাহিনীটি থেকে শান্তিরক্ষায় মোতায়েন করা হয়েছে৷ আমাদের একাধিক সূত্র বাহিনীটিকে ‘‘ডেথ স্কোয়াড’’ আখ্যা দিয়েছে৷
বেশ কয়েকমাস ধরে ডিডাব্লিউ এবং এর সহযোগীরা বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে সামরিক এবং জাতিসংঘের কয়েকটি সূত্রের সাক্ষাৎকার নিয়েছে৷ পাশাপাশি বিভিন্ন গোপন সামরিক নথি এবং মোতায়েন তালিকা যাচাইবাছাই করেছে এবং অনেক পরিশ্রমের পর ফ্লিকার, লিংকডইন ও ফেসবুকে বিভিন্ন কর্মকর্তাকে সনাক্ত করেছে৷
এক ব্যক্তির জাতিসংঘে মোতায়েনের বিষয়টি তার প্রতিদিনের দৌড়ানোর রুট ধরে নিশ্চিত হওয়া গেছে৷ তিনি একটি জগিং অ্যাপে সেই তথ্য আপলোড করতেন৷ এই উৎসাহী দৌড়বিদ মাসের পর মাস সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকের রাজধানী বাংজিতে দৌড়েছেন৷ জাতিসংঘের মিনুস্কা মিশন সেখানে৷ আরেক ছবিতে তিনি ব়্যাব সদরদপ্তরের সামনে সেলফির জন্য পোজ দিয়েছেন৷
শান্তিরক্ষীদের মাঝে টর্চার সেল চালানো দুই উপপরিচালক
আমরা আমাদের অনুসন্ধানে দেখেছি একশোর বেশি ব়্যাব সদস্য শান্তিরক্ষা মিশনে গিয়েছেন, এবং তাদের মধ্যে অন্তত ৪০ জন গত পাঁচবছরে গিয়েছেন৷
যদিও আমাদের কাছে তথ্যপ্রমাণ নেই যে প্রত্যেক সদস্যই অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন, তাদের অন্তত তিনজন — নাঈম এ., হাসান টি. এবং মাসুদ আর. — ব়্যাবের কুখ্যাত ইন্টেলিজেন্স উইংয়ে কাজ করেছেন৷ তাদের দুজন সেখানে উপপরিচালক ছিলেন৷ একাধিক সূত্র অনুযায়ী, ব়্যাবের এই ইউনিটটি বাংলাদেশ জুড়ে টর্চার সেলের একটি নেটওয়ার্ক পরিচালনা করে৷ এসব সেলের কিছু সেফ হাউস রয়েছে, অন্যগুলো ব়্যাবের কম্পাউন্ডে আড়ালে রয়েছে৷ ব়্যাবের হাত থেকে বেঁচে ফেরা একাধিক ব্যক্তি এবং সামরিক সূত্র ডিডাব্লিউ এবং নেত্র নিউজকে এসব সেলে মারধর, ভয় দেখাতে হত্যা করার অভিনয়, ওয়াটারবোর্ডিং এবং বৈদ্যুতিক শক দেয়া হয় বলে জানিয়েছেন৷
‘‘সহজলভ্য সব টুলই আমাদের রয়েছে,’’ ব়্যাবের সাবেক এক কর্মকর্তা ব্যাখ্যা করেন৷ তিনি সেখানে যেসব বর্বর ঘটনা দেখেছেন তার মধ্যে একটি হচ্ছে একজন বন্দিকে কন্টেইনারের মধ্যে ঢুকিয়ে সেটির নিচে আগুন জ্বালিয়ে দেয়া৷
‘‘এক পর্যায়ে ভেতরের তাপমাত্রা অসহনীয় হয়ে ওঠে এবং সেই বন্দি মুখ খুলতে বাধ্য হন,’’ বলেন তিনি৷
আরেকটি সূত্র নিশ্চিত করেছে যে টর্চার সেলে ‘‘বেসামরিক নাগরিকদের কাছ থেকে তথ্য বের করা হয়৷’’
একটি সূত্র ব়্যাব, নেত্র নিউজ এবং স্যুডডয়চে সাইটুংকে জানিয়েছেন যে এই দুই উপপরিচালক নির্যাতন এবং হত্যার মতো অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন৷
যদিও এই দাবি স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি, তবে একাধিক অন্যান্য সূত্র নিশ্চিত করেছে যে কমান্ড দেওয়ার ক্ষমতা থাকা উপপরিচালকরা টর্চার সেলে যা কিছু ঘটছে তা অনুমোদন করে থাকতে পারেন কিংবা অন্তত জানতেন সেখানে কী হচ্ছে৷
কিন্তু তাসত্ত্বেও তাদেরকে ঝুঁকিতে থাকা বিভিন্ন বেসামরিক সম্প্রদায়কে সুরক্ষা দিতে শান্তিরক্ষী হিসেবে মোতায়েন করা হয়েছিল৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর শান্তিরক্ষা বাহিনী তৈরির ধারনার জন্ম হয়৷ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের তত্ত্বাবধানে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলো থেকে সেনা এবং পুলিশ সদস্যদের নিয়ে এই বাহিনী তৈরি করা হয়৷ বিভিন্ন দেশের সরকার ব্যর্থ হলে এবং দেশগুলোতে গভীর সংকট সৃষ্টি হলে সেসব দেশে শান্তিরক্ষায় এই বাহিনীকে পাঠায় নিরাপত্তা পরিষদ৷
বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে হাজার হাজার শান্তিরক্ষী মোতায়েন রয়েছে৷ সংঘাত এবং সংকট নিরসনে গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রী কঙ্গো থেকে সাউথ সুদান, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, কসভো কিংবা কাশ্মীর অবধি নানা অঞ্চলে তাদের দেখা মেলে৷
শান্তিরক্ষার আদর্শ অনেক উঁচু হলেও বিগত বছরগুলোতে একক সেনা থেকে পুরা কন্টিনজেন্ট অবধি নানা কেলেঙ্কারিতে জড়িয়েছে৷ জাতিসংঘ দ্রুত সেসবের নিন্দাও জানিয়েছে৷ সমালোচকরা বলছেন, শান্তিরক্ষা কার্যক্রম ফলপ্রসু হচ্ছে না, যদিও যারা শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের পক্ষে, তারা বলছেন, অসংখ্য জীবন বাঁচিয়েছে এই বাহিনী৷
২০১২ সালে বেশ কয়েকটি যৌন কেলেঙ্কারির ঘটনা শিরোনাম তৈরি করে৷ বিশেষ করে হাইতিতে শিশুদের ঘটনার পর জাতিসংঘ তার কর্মীদের জন্য নতুন মানবাধিকার নীতি ঘোষণা করে৷
শান্তিরক্ষীদের যাচাইয়ের দায়িত্বে ‘এবিউসিভ সরকার’
শান্তিরক্ষায় সেনা পাঠানো দেশগুলো সাধারণ ফোর্স কমান্ডার এবং তাদের সহকারীদের বাদে অন্যান্য সেনা সদস্যদের বাছাই এবং যাচাইয়ের দায়িত্ব পালন করে থাকে৷ এসব দেশকে প্রত্যেক সেনার জন্য প্রত্যয়ন দিতে হয় যে, তিনি মানবাধিকার লঙ্ঘন করেননি বা এমন কোনো অভিযোগও তার বিরুদ্ধে নেই৷
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এর অর্থ হচ্ছে ‘‘তারা একটি এবিউসিভ সরকারকে তার কর্মকর্তারা এবিউসিভ কিনা তা নির্ধারণ করতে বলছে,’’ বলেন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ দক্ষিণ এশিয়ার উপপরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি৷
বাংলাদেশ সরকার, গাঙ্গুলি ব্যাখ্যা করেন, ‘‘মনে হয় বিশ্বাস করে না যে, যারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করে তাদের বিচার করার বা জবাবদিহির আওতায় আনার দরকার আছে৷’’ এখন অবধি অল্প কয়েকজন ব়্যাব সদস্য বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন৷
এবং একারণেই তিনিসহ দেশি বিদেশি আরো কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন দীর্ঘদিন ধরে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে ব়্যাবকে পুরোপুরি নিষিদ্ধের দাবি জানাচ্ছে৷
শুধুমাত্র তারাই এই বিষয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন এমন নয়: জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য স্বাধীন বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত জাতিসংঘের ‘কমিটি এগেনস্ট টর্চার’ ২০১৯ সালের আগস্টে বাংলাদেশ বিষয়ক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে৷
এর লেখকরা ‘‘অসংখ্য প্রতিবেদনে’’ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যেখানে ব়্যাবের সদস্যদের বিরুদ্ধে ‘‘নির্যাতন, নির্বিচারে গ্রেপ্তার, গোপনে আটক, গুম এবং তাদের হেফাজতে থাকা অবস্থায় বিভিন্ন ব্যক্তিকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যার বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ রয়েছে৷’’
‘গভীর উদ্বেগ’
প্রতিবেদনের লেখকদের একজন ইয়েন্স মডভিগ৷ এই মেডিকেল ডক্টর নির্যাতনবিরোধী ডেনিশ ইন্সটিটিউট ডিগনিটি পরিচালনা করেন৷ কোপেনহেগেনের এক সাধাসিধে অফিস ব্লকে তার কার্যালয় অবস্থিত৷
প্রতিষ্ঠানটির ছোট্ট রান্নাঘরে কফি তৈরি করতে করতে তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনীর মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে বিশেষজ্ঞদের ‘গভীর উদ্বেগের' কথা স্মরণ করেন৷ তিনি জানান যে, এই উক্তিটি তারা হালকাভাবে করেননি৷
মডভিগ বলেন, ‘‘ব়্যাবের সাবেক এবং বর্তমান সদস্যদেরকে শান্তিরক্ষা মিশনে যেতে দেয়া উচিত হবে না বলে সুপারিশ করেছিল কমিটি৷’’
তাসত্ত্বেও আমাদের অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে কিছুই হয়নি৷
ডিডাব্লিউ, নেত্র নিউজ এবং স্যুডডয়চে সাইটুং একাধিকবার এই বিষয়ে ক্যামেরার সামনে বক্তব্য দিতে জাতিসংঘের ‘‘ডিপার্টমেন্ট অব পিসকিপিং অপারেশন্স’’ এর প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে৷ কিন্তু বিভাগটি তাতে রাজি হয়নি৷
তার বদলে জাতিসংঘ আমাদের অনুসন্ধানের ব্যাপারে লিখিত বক্তব্য দিতে রাজি হয়েছে৷ এক মুখপাত্র লিখেছেন, ‘‘প্রত্যেক ব্যক্তিকে যাচাইবাছাইয়ের জন্য আমাদের কাছে প্রয়োজনীয় সম্পদ নেই৷ তবে সেনা এবং পুলিশ সদস্য সরবরাহকারী দেশগুলোর সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব সম্পর্কে আমাদের একটি দীর্ঘস্থায়ী নীতি বলবৎ আছে৷’’
বাংলাদেশেরক্ষেত্রে, সেই মুখপাত্র জানান, ‘‘প্রতিরক্ষা এবং নিরাপত্তা বাহিনীর, সুনির্দিষ্টভাবে ব়্যাব সদস্যদের মাধ্যমে, মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগগুলো নিয়ে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা দ্বিপাক্ষিকভাবে দেশটির জাতীয় কর্তৃপক্ষগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে যুক্ত থেকে উদ্বেগ জানিয়ে আসছে৷’’
জাতিসংঘ কি ব্ল্যাকমেইলের কাছে অসহায়?
আমরা অবশ্য জাতিসংঘের একজনকে খুঁজে পেয়েছি যিনি ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হয়েছেন৷ অ্যান্ড্রু গিলমোর জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সাবেক সহকারী মহাসচিব৷ বর্তমানে তিনি বার্লিনে ব্যর্গহফ ফাউন্ডেশনের নেতৃত্বে রয়েছেন৷ এটি বিশ্বব্যাপী শান্তির পক্ষে প্রচারণা চালায়৷ দীর্ঘদিন জাতিসংঘে কাজ করা এই কূটনীতিক জানান যে, তিনি সাক্ষাৎকারের বিষয় এবং মুডের উপর ভিত্তি করে কোন জ্যাকেট পরবেন তা নির্ধারণ করেন৷
শান্তিরক্ষা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন বিষয়ক প্রতিবেদনের জন্য তিনি বিষন্ন নীল বেছে নিয়েছেন৷
আমি যদি এখনো জাতিসংঘে থাকতাম, তিনি বলেন, ‘‘তাহলে সম্ভবত এটা বলতে এত স্পষ্টভাষী হতে পারতাম না যে, আমরা কিছু সংখ্যক সত্যিই খুব আজেবাজে সেনা পাই এবং কিছু খুব নিষ্ঠুর সেনাও৷’’
তিনি এটাও জানান যে বাংলাদেশ কোনো অনন্য রাষ্ট্র নয়৷ গিলমোর বলেন, ‘‘এটাই প্রথম নয় যে সদস্য রাষ্ট্রগুলো দুর্বল মানবাধিকার রেকর্ড থাকা মানুষদেরকে জাতিসংঘে তাদের ব্যাটেলিয়নে যুক্ত করেছে৷''
কখনো কখনো, তিনি বলেন, ‘‘এমনও হতে পারে যে পুরো কন্টিনজেন্ট কোনো মামলায় জড়িয়েছিল, যেমন তাদের নিজের দেশে সাধারণ মানুষকে দমন, এবং অন্যান্য সময়ে এটা একক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও ঘটেছে৷’’
তবে তিনি গুরুত্ব দিয়ে জানান যে জাতিসংঘ এধরনের ঘটনা রুখতে বারংবার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে৷
তিনি অবশ্য স্বীকার করেছেন যে, যদি জাতিসংঘ দেশগুলোকে অনেক বেশি চাপ দিত তাহলে তারা তাদের সব সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়ার হুমকি দেওয়ার ঝুঁকি ছিল৷ ‘‘যদি সেই সদস্য দেশের সরকার একটি কন্টিনজেন্ট বা একজন একক ব্যক্তিকে সামনে ঠেলে দেয় তখন কিছু করা বেশ কঠিন ছিল,’’ যোগ করেন তিনি৷
একবার, তিনি বলেন, ‘‘একটি দেশ যেটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল আক্ষরিক অর্থেই বলেছে, ঠিক আছে, আমরা একসঙ্গে সব সেনা প্রত্যাহার করে নেবো৷ এবং তখন সেই সময়কার জাতিসংঘের মহাসচিবকে সেই দেশে গিয়ে দেশটির রাষ্ট্রপ্রধানের কাছে মূলত ক্ষমা চাইতে হয়েছিল৷’’
‘‘অন্যথায়, জাতিসংঘের চারটি শান্তিরক্ষা কার্যক্রম ভেঙে পড়তো,’’ বলেন তিনি৷
তবে তার সাক্ষ্য একটি বিষয়ের দিকে মনোযোগ টানে: শান্তিরক্ষী ইস্যুতে জাতিসংঘকে ব্ল্যাকমেইলের কাছে অসহায় মনে হয়৷
জাতিসংঘের একটি সূত্র এই বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন: সামান্য সমালোচনাতেও বাংলাদেশের কর্মকর্তারা সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়ার হুমকি দেন৷ বাংলাদেশ জাতিসংঘে সেনা পাঠানো অন্যতম একটি রাষ্ট্র৷ চলতি বছরের মার্চ অবধি প্রায় ছয় হাজার বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে মোতায়েন ছিলেন৷
তবে এটা নিশ্চিত নয় যে, বাংলাদেশ আসলেই জাতিসংঘের মিশন থেকে নিজেদের সরিয়ে নেবে কিনা৷ কারণ এসব মিশন একক সেনাদের এবং যেসব দেশ তাদের পাঠাচ্ছে সেসবের জন্য লোভনীয় ব্যাপার৷
সরকারি কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ গত ২৩ বছরে শান্তিরক্ষা মিশন থেকে ২৮ হাজার কোটি টাকা আয় করেছে৷ মিশনে একজন সেনা সদস্য নিজ দেশে থাকাকালীন সময়ের তুলনায় বেশি বেতন পান৷
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বিষয়ক মুখপাত্র অবশ্য আন্তর্জাতিক সংগঠনটি দৃশ্যত হুমকির কাছে অসহায় হয়ে পড়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘বর্তমানে মোতায়েনকৃত ৬৫ হাজার সেনার দশ শতাংশেরও কম সবচেয়ে বড় সেনা সরবরাহকারী দেশ থেকে এসেছেন৷ ফলে একক কোনো সেনা সহায়তা প্রদানকারী দেশ শান্তিরক্ষা কর্মকান্ডের কার্যকারিতা নষ্ট করার জন্য সব সেনা প্রত্যাহারের বিশ্বাসযোগ্য হুমকি দিতে পারে না৷’’
জাতিসংঘের হাত দৃশ্যত বাঁধা
গিলমোর জাতিসংঘের হাত বাঁধা মনে করার একটি কারণও ব্যাখ্যা করেছেন৷ তিনি যখন ‘‘অনেক, অনেক তরুণ’’ ছিলেন, তখন অধিকাংশ শান্তিরক্ষী সুইডেন এবং আয়ারল্যান্ডের মতো দেশগুলো থেকে আসতো৷
কিন্তু সময়ের সাথে সাথে গত শতকের শেষের দশকের শুরুর দিকে শীতল যুদ্ধের যখন ইতি ঘটেছে, তখন মিশনগুলোর ভয়াবহতা দেখে পশ্চিমা সরকারগুলো শান্তিরক্ষা কর্মকাণ্ড থেকে ক্রমশ সেনা সরিয়ে নিতে শুরু করে৷ তার বদলে তারা অর্থ সহায়তা প্রদান করায় প্রাধান্য দেয়৷
জাতিসংঘে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকা পশ্চিম ইউরোপের একটি দেশের এক রাজনৈতিক সূত্র জানান যে, গণতান্ত্রিক সরকারগুলোকে সেনাদের রক্তক্ষয় কতটা সহ্য করা যাবে তা বিবেচনায় আনতে হয়৷ যদি জাতিসংঘের মিশনে পাঠানো সেনাদের মরদেহ ফিরতে শুরু করে, তিনি ব্যাখ্যা করেন, তখন সেই সরকারগুলোকে সংসদীয় তদন্তের মুখে পড়তে হয়৷ কিন্তু, তিনি যোগ করেন, বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর ক্ষেত্রে এটি কোনো সমস্যা নয়৷ একইসঙ্গে তিনি স্বীকার করেন যে, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশন একক সেনা সদস্যদের পাশাপাশি বিভিন্ন সরকারের জন্যও নিজেদের কোষাগার সমৃদ্ধ করার লোভনীয় সুযোগ৷
প্রায় ‘কখনোই পর্যাপ্ত' শান্তিরক্ষী ছিল না
ফলাফল: ‘‘জাতিসংঘে খুব, খুব কম উচ্চপ্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, পশ্চিমা আদর্শের সেনা কাজ করছেন,’’ বলেন গিলমোর৷ জাতিসংঘের আনুষ্ঠানিক পরিসংখ্যানও তার এই বক্তব্যকে সমর্থন করে৷ বর্তমানে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে সবচেয়ে বেশি সেনা সরবরাহকারী প্রথম পাঁচটি দেশ হচ্ছে: নেপাল, ভারত, রুয়ান্ডা, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান৷
‘‘প্রায় কখনোই পর্যাপ্ত সেনা ছিল না,’’ বলেন গিলমোর৷ ‘‘এটা এমন নয় যে জাতিসংঘ বলতে পারে, ঠিক আছে, আমরা এই দলটি নেবো কারণ এই দেশ মানবাধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে৷ এবং আমি দুঃখিত, আপনাদেরকে নিতে পারছি না৷’’
জাতিসংঘের ‘‘এমন বাছাইয়ের সুযোগ নেই৷’’
গিলমোর বলেন, ‘‘এমন এমন পরিস্থিতি তৈরি হয় যেখানে আক্ষরিক অর্থেই শান্তিরক্ষীরা অনুপস্থিত থাকলে হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানী হতে পারতো৷ আর তখন আপনাকে সমন্বয় সাধন করতে হয়, হাজার হাজার লোকের মৃত্যুর চেয়ে দুই তিনটি ‘পচা আপেল' বা ‘মন্দ লোক' পাঠানো অপেক্ষাকৃত কম খারাপ বিকল্প মনে হয়৷’’
শ্রীলঙ্কা: ‘ব্যাপকভাবে দায়মুক্তি’
এই স্বীকারোক্তিকে ‘অত্যন্ত বেদনাদায়ক’ মনে করেন ফ্রান্সিস হ্যারিসন৷ তিনি একসময় সাংবাদিক ছিলেন, পরবর্তীতে অ্যাক্টিভিস্ট হিসেবে শ্রীলঙ্কায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোর তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করা শুরু করেন৷
শ্রীলঙ্কায় সেনাবাহিনী এবং তামিল টাইগারদের মধ্যে যুগ যুগ ধরে চলা গৃহযুদ্ধের সময় সংঘটিত নৃশংসতার তথ্যপ্রমাণ হিসেবে বিভিন্ন ছবি আর জবানবন্দি ল্যাপটপে বিভিন্ন রংয়ের ফোল্ডারে জমিয়ে রেখেছেন তিনি৷ এই সংঘাত ২০০৯ সালে এক বিশেষ পরিণতিতে পৌঁছায়৷ দুইপক্ষই ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত ছিল, যা জাতিসংঘ বলছে যুদ্ধাপরাধের সমতুল্য হতে পারে৷
হ্যারিসনের অনেক নথিপত্রের মধ্যে একটি কিছুটা অস্বচ্ছ ছবিতে শ্রীলঙ্কার একদল কর্মকর্তাকে দেখা যাচ্ছে যারা বৃষ্টি থেকে বাঁচতে রঙিন ছাতার নিচে দাঁড়িয়ে আছেন৷ তাদের সামনে তেরপলের উপরে রাখা আছে বেশ কয়েকটি মরদেহ৷ একজন কর্মকর্তা সেগুলোর দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করছিলেন৷
তার নাম শেভেন্দ্র সিলভা৷
তিনি ৫৮ ডিভিশনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন যেটি ‘‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ বিস্তৃত মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে’’ জড়িত বলে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে৷ গৃহযুদ্ধ চলাকালে যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার দায়ে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে শেভেন্দ্র সিলভার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷
তার আগে ২০১৯ সালে অবশ্য শ্রীলঙ্কা তাকে সেনাপ্রধান করে৷ এই নিয়ে জাতিসংঘের নিজস্ব মানবাধিকার গ্রুপসহ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে হট্টগোল সৃষ্টি হলে ভবিষ্যতে শান্তিরক্ষা মিশনে শ্রীলঙ্কার সেনা মোতায়েন স্থগিত রাখার ঘোষণা দেয় জাতিসংঘ৷ তবে ‘‘যেখানে এই স্থগিতাদেশের কারণে জাতিসংঘের কর্মকাণ্ড পরিচালনা ঝুঁকির মুখে পড়বে’’ সেখানে এই স্থগিতাদেশ কার্যকর হবে না বলেও জানায় জাতিসংঘ৷
জাতিসংঘের নিজস্ব পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৯ সালে ৬৮৭ জন শান্তিরক্ষী পাঠিয়েছিল শ্রীলঙ্কা৷ সিলভা সেনাপ্রধান হওয়ার এক বছর পরও তারা ৬৬৫ জন সেনা পাঠিয়েছে৷
এই স্থগিতাদেশ, জাতিংঘের শান্তিরক্ষা বিষয়ক মুখপাত্র লিখেছেন, ‘‘জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রম পরিচালনাকে মারাত্মক ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারতো বলে এসব কন্টিনজেন্টের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম করা হয়, একইসঙ্গে বিদ্যমান মোতায়েনগুলো পর্যালোচনায় রাখা হয়েছিল৷’’
তার এই বক্তব্য অবশ্য আগের বক্তব্যের সঙ্গে মানানসই নয় যেখানে তিনি বলেছেন যে একক কোনো সেনা সহায়তা প্রদানকারী দেশ সেনা প্রত্যাহার করে নিয়ে শান্তিরক্ষা কর্মকান্ডের কার্যকারিতা নষ্ট করতে পারবে না৷
বেশ কয়েকটি ছবিতে দেখা গেছে, শেভেন্দ্র সিলভার উর্দিতে অনেক মেডেল ঝুলছে, আর অনেকের মাঝে শুধু তার মাথায় জাতিসংঘের গোল টুপি৷
‘‘আপনি কি ধারনা করতে পারেন এটা দেখার পর গৃহযুদ্ধের ভুক্তভোগীদের, লঙ্ঘনের শিকারদের, প্রতিক্রিয়া কী হয়েছিল?,'' হ্যারিসনের কণ্ঠে স্পষ্টতই রাগ ফুটে উঠেছিল৷ ‘‘এটি ব্যাপকভাবে দায়মুক্তি, যা বন্ধে কেউই কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না৷’’
হ্যারিসন শ্রীলঙ্কার একক শান্তিরক্ষীদের সম্পর্কে, যারা সম্ভবত যুদ্ধের সময় নৃশংসতার সঙ্গে জড়িত ছিলেন, জাতিসংঘ এবং অন্যদেরকে কয়েকবছর ধরে সতর্ক করেছিলেন৷ তারপরও তাদের শান্তিরক্ষী হিসেবে মোতায়েন করা হয়েছিল৷
২০১৯ সালে তিনি এক সামরিক কর্মকর্তা সম্পর্কে জাতিসংঘকে সতর্ক করেছিলেন, যাকে তখন মালিতে কন্টিনজেন্ট কোম্পানি কমান্ডার হিসেবে মোতায়েন করা হচ্ছিল৷
কিন্তু জাতিসংঘ মনে হচ্ছে তার সেই সতর্কতা গুরুত্বের সঙ্গে নেয়নি৷ এটা আমাদের খুঁজে পেতে বেশি সময় লাগেনি যে সেই ব্যক্তিকে ২০১৯ সালে আসলেই মালিতে কন্টিনজেন্ট কোম্পানি কমান্ডার হিসেবে মোতায়েন করা হয়েছিল৷ এবং সেটা ঘটেছিল হ্যারিসন সতর্ক করার কিছুদিন পর৷ এক ছবিতে জাতিসংঘের গোল টুপি মাথায় তাকে এক বিমানবন্দরে দেখা যায় যেখানে তার সঙ্গে ছিলেন সেনাপ্রধান শেভেন্দ্র সিলভা৷
এবং আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে ২০২১ সালেও তিনি মালিতে দায়িত্ব পালন করেছেন৷
হ্যারিসন জানান যে, তার সতর্কবার্তা ‘‘গ্রাহ্য করা হয়নি৷’’
জাতিসংঘের মুখপাত্র ডিডাব্লিউ, নেত্র নিউজ এবং স্যুডডয়চে সাইটুংকে লিখেছেন যে, তারা এসব অভিযোগ ‘‘গুরুত্ব সহকারে নিয়েছিল৷ কিন্তু তারা সেসময় এমন কোনো তথ্য পাননি যা যুক্তিসঙ্গত ভিত্তি দেয় যে, সেই ব্যক্তি সম্ভবত মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী৷’’
‘বাংলাদেশ কাদের পাঠাচ্ছে তা কেউ পরোয়া করে না’
আমাদের অনুসন্ধান একটি বিষয়ের দিকে ইঙ্গিত দিচ্ছে: সেনা বাছাইয়ের বিষয়টি যখন সামনে আসে তখন জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রম বিভাগ এক কঠিন দ্বিধার মধ্যে পড়ে যায়৷ এটির হয় এমন সেনাদের মেনে নিতে হয় যারা এটি জানে যে কিছুক্ষেত্রে হয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত, অথবা সেনা প্রদানকারী দেশগুলোর সেনা প্রত্যাহারের হুমকির মুখে পড়তে হয়৷ ফলে জাতিসংঘের ভাষায় পৃথিবীর সবচেয়ে অসহায়দের সুরক্ষা দেয়ার কর্মকাণ্ড চালিয়ে নিতে এটির কিছু বিষয় থেকে নজর সরিয়ে নিতে হয়৷
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আমাদের অনুসন্ধান জানাচ্ছে জাতিসংঘ সম্ভবত নজর সরিয়ে রাখার নীতি নিয়েছে৷
কেউই, পশ্চিম ইউরোপের এক রাজনৈতিক সূত্র জানিয়েছেন, আসলে পরোয়া করে না যে বাংলাদেশ কাদের পাঠাচ্ছে, কারণ জাতিসংঘ মিশনে সেনা ঘাটতি রয়েছে৷ এবং, তিনি যোগ করেন, বাংলাদেশের মতো সামরিকীকৃত দেশগুলোর সেনারা সাধারণত ভালোভাবে প্রশিক্ষিত হয়৷
এই বক্তব্য এটা ব্যাখ্যা করতে পারে যে কেন রাজধানী ঢাকার কাছে জাতিসংঘের প্রশিক্ষণক্ষেত্রে ডয়চে ভেলের সাম্প্রতিক সফরের সময়, যেটি সতর্কতার সঙ্গে সাজানো হয়েছিল, একজন জেনারেল আগে থেকে অনুমোদিত প্রশ্নের উত্তরে জানান যে বাংলাদেশ আসলে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষায় অবদান বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে৷
এটা দেখাচ্ছে, তিনি বলেন, ‘‘তারা আমাদের কেমন গুরুত্ব দেয়৷’’ সেই সময় একজন প্রেস কর্মকর্তা পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন৷
তারা বলতে তিনি অবশ্যই জাতিসংঘকে বুঝিয়েছেন৷
আমরা এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা কর্মকর্তারাসহ বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা সরকারের কাছে আমাদের অনুসন্ধান নিয়ে তাদের বক্তব্য জানতে চেয়েছিলাম৷ কিন্তু তারা কোনো জবাব দেয়নি৷
জাতিসংঘের ‘ডিপার্টমেন্ট অব পিসকিপিং অপারেশন্স' গুরুত্ব সহকারে জানিয়েছে যে ‘‘সেনাদের অধিকাংশই ভালো করেন, যদিও তাদের অনেককে প্রতিকূল পরিবেশে সীমিত সম্পদ নিয়ে দায়িত্ব পালন করতে হয়৷’’-ডয়চে ভেলে

সেনাপ্রধান আজিজ এবং পরিবারের সদস্যদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা
সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ এবং তার পরিবারের সদস্যদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ব্যাপক দুর্নীতি এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া খর্বে তার সম্পৃক্ততার কারণে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে বলে সোমবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে স্টেট ডিপার্টমেন্ট।
ভিসা নীতি ঘোষণার পর এই প্রথম বাংলাদেশের কোনো শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের সরাসরি ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার জানান, স্টেট ডিপার্টমেন্ট, ফরেন অপারেশনস এবং রিলেটেড পোগ্রামস অ্যাপ্রোপ্রিয়েশনস অ্যাক্ট এর ৭০৩১ (সি) ধারায় এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

এই নিষেধাজ্ঞার কারণে আজিজ এবং তার পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারবেনা, বলে বিবৃতিতে বলা হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ব্যাপক দুর্নীতিতে জড়িত ছিলেন বাংলাদেশের সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ। তার বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহের অবমূল্যায়ন এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান ও প্রক্রিয়ার ওপর জনগণের আস্থা কমেছে।
জেনারেলের আজিজের দুর্নীতি প্রসঙ্গে বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, জনগণের ক্রয়সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্যভাবে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন আজিজ আহমেদ। একইসঙ্গে কোনোধরনের জবাবদিহিতা ছাড়াই নিজের ভাইকে বাংলাদেশে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করার সুযোগ করে দিয়েছেন তিনি। এছাড়া অন্যায্যভাবে সামরিক খাতে কন্ট্রাক্ট পাওয়া নিশ্চিত করার জন্য তিনি তার ভাইয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন। তিনি নিজের স্বার্থের জন্য সরকারি নিয়োগের বিনিময়ে ঘুষ নিয়েছেন।
এই নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান এবং আইনের শাসন শক্তিশালী করতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি পুর্নব্যক্ত করেছে বলে জানান মিলার।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও আইনের শাসন শক্তিশালী করতে যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গীকার পুনরায় নিশ্চিত করা হলো। সরকারি সেবা আরও স্বচ্ছ ও নাগরিকদের সেবা লাভের সুযোগ তৈরি, ব্যবসা ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং মুদ্রা পাচার ও অন্যান্য অর্থনৈতিক অপরাধের অনুসন্ধান ও বিচার নিশ্চিতে সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বাংলাদেশে দুর্নীতিবিরোধী প্রচেষ্টায় সহায়তা দেয় যুক্তরাষ্ট্র।

জাতিসংঘের পূর্ণাঙ্গ তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ:হত্যাকাণ্ডসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে শেখ হাসিনার সরাসরি জড়িত থাকার প্রমাণ!
“এই নৃশংস প্রতিক্রিয়া ছিল সাবেক সরকারের একটি পরিকল্পিত এবং সমন্বিত কৌশল, যা জনতার বিরোধিতার মুখে ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে চেয়েছিল।"-ভলকার তুর্ক ,জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার
পতিত শেখ হাসিনাই জুলাই হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা। তার সরাসরি পরিকল্পনা এবং নির্দেশে ওই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই নারকীয় হত্যাকাণ্ডে অন্তত ১৪০০ মানুষ নিহত হয়। নিহতদের মধ্যে শতকরা ১৩ ভাগ শিশু। জুলাই বিপ্লবে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তদন্তে জাতিসংঘ গঠিত ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এসব ভয়াবহ তথ্য উঠে এসেছে।
বুধবার বাংলাদেশ সময় আড়াইটায় জেনেভায় জাতিসংঘ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে হত্যাকাণ্ডসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে শেখ হাসিনার সরাসরি জড়িত থাকার প্রমাণ তুলে ধরে বলা হয়, একজন পদস্থ কর্মকর্তা সাক্ষ্য দিয়ে বলেছেন, ১৯ জুলাই নিরাপত্তা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের এক বৈঠকে নির্দেশ দিয়ে বলেন, বিক্ষোভের মূল হোতা এবং যারা সমস্যা তৈরি করছে, তাদের হত্যা করে লাশ গুম করে ফেলো। ৪ আগস্ট সকালে এবং সন্ধ্যায় নিরাপত্তা বাহিনীর শীর্ষ কর্তাব্যক্তিদের নিয়ে জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের দুটি বৈঠক করেন। বৈঠকে যেকোনো মূল্যে বলপ্রয়োগের মাধ্যমে ৫ আগস্টের ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি পণ্ড করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
প্রতিবেদনে জুলাই বিক্ষোভের সময়ে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড এবং চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাকে মানবতাবিরোধী অপরাধ বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে।বিক্ষোভ দমনে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযান পরিচালনায় রাজনৈতিক নেতৃত্বের ভূমিকার কথা তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়, একজন শীর্ষ কর্মকর্তা তার দেওয়া সাক্ষ্যে বলেন, বিক্ষোভ দমনে যাবতীয় নির্দেশ আসত রাজনৈতিক নেতাদের কাছ থেকে। ১৮ জুলাই অনুষ্ঠিত কোর কমিটির এক বৈঠকে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বিক্ষোভ দমনে প্রাণঘাতী শক্তি প্রয়োগের নির্দেশ দেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিক্ষোভকারীদের দমন এবং গণগ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, সেনাবাহিনী এবং ডিজিএফআইসহ অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার পদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
জাতিসংঘের এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দমন এবং নির্বিচারে আটকের উদ্দেশ্যে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করা হয়েছিল।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের আমন্ত্রণে ওএইচসিএইচআর ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট ২০২৪-এর মধ্যে সংঘটিত অভিযুক্ত মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং অবমাননা বিষয়ে একটি স্বাধীন ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশন পরিচালনা করে। বাংলাদেশে ব্যাপক বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিত এবং তৎক্ষণিক প্রভাব বুঝতে এ অনুসন্ধান চালানো হয়। সংগৃহীত সব তথ্য পুঙ্খানুপুঙ্খ এবং মুক্তভাবে বিশ্লেষণের ভিত্তিতে ওএইচসিএইচআরের কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়েছে যে সাবেক সরকার এবং এর নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা বাহিনী আওয়ামী লীগের সাথে যুক্ত হয়ে সহিংস উপায়গুলো ব্যবহার করে পদ্ধতিগতভাবে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িয়ে পড়ে।
এ কারণে, শত শত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটে, হাজার হাজার বিক্ষোভকারীর বিরুদ্ধে জোরপূর্বক বলপ্রয়োগ করা হয়। নির্বিচারে আটক, এবং নির্যাতন এবং অন্যান্য ধরনের নিগ্রহের ঘটনা ঘটে। অধিকন্তু ওএইচএসিএইচআর যৌক্তিক কারণে মনে করে যে বিক্ষোভ এবং ভিন্নমত দমনের কৌশল হিসেবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং ঊর্ধ্বতন নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের অবগতি, সমন্বয় এবং নির্দেশনায় পরিচালিত হয়েছে। এসব গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা আন্তর্জাতিক ফৌজদারি অপরাধ আইনের দৃষ্টিকোণ থেকেও উদ্বেগজনক। তাই, কোন মাত্রার মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং নির্যাতন (স্বতন্ত্র আন্তর্জাতিক অপরাধ হিসেবে) ও দেশীয় আইনের অধীন গুরুতর অপরাধসমূহ সংঘটিত হয়েছে তা মূল্যায়নের জন্য অতিরিক্ত ফৌজদারি তদন্তের প্রয়োজন রয়েছে।
স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধাদের পরবর্তী প্রজন্মদের সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ কোটা সংরক্ষণ পুনর্বহালের দাবির প্রেক্ষিতে ৫ জুন ২০২৪ হাইকোর্টের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিক এ বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু ইতোমধ্যে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের মধ্যে গভীর ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল, যার মূলে ছিল বিদ্যমান রাজনীতি ও পরিচালন ব্যবস্থা সমাধান করতে ব্যর্থ শাসনব্যবস্থার ভঙ্গুরতা এবং দুর্নীতি। প্রকৃতপক্ষে, অর্থনৈতিক বৈষম্য সমস্যাকে আরও জটিল করে তুলেছিল এবং অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার ভোগের ক্ষেত্রে প্রবেশগম্যতার অভাব জনগণের ক্ষোভকে আরও উস্কে দিয়েছিল। বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক, পেশাগত এবং ধর্মীয় পটভূমি থেকে আসা হাজার হাজার বাংলাদেশী, নারী ও শিশু বিক্ষোভে যোগ দিয়েছিল। ছাত্র-জনতা অর্থপূর্ণ সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক সংস্কারের দাবি জানিয়েছিল। জনগণের ক্রমবর্ধমান ক্ষোভ দমন এবং ক্ষমতা আঁকড়ে ধরার প্রচেষ্টায় সাবেক সরকার ক্রমবর্ধমান সহিংসতাকে অবলম্বন হিসেবে বেছে নেয় এবং পদ্ধতিগতভাবে বিক্ষোভ দমনের চেষ্টা করে।
জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে সাবেক সরকার এবং আওয়ামীলীগ ক্রমাগত সশস্ত্র কুশীলবসমূহকে সুসংহত করতে থাকে। বিক্ষোভ দমনের প্রাথমিক চেষ্টা হিসেবে সরকারের মন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগ নেতারা, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এবং তার আশেপাশে ছাত্র-ছাত্রীদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশের ওপর ছাত্রলীগ কর্মীদের লাঠি এবং ধারালো অস্ত্র এমনকি আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে আক্রমণে প্ররোচিত করে। এমসয় শিক্ষার্থীরা কখনও কখনও আত্মরক্ষার চেষ্টা করে। এর প্রতিক্রিয়ায় সরকার আরও গুরুতর সহিংসতার পথ বেছে নেয়। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের লঙ্ঘন করে বাংলাদেশ পুলিশ, আওয়ামী লীগ সমর্থকদের একটি সশস্ত্র দলের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সমন্বয় করে এবং অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করে শান্তিপূর্ণ ছাত্র বিক্ষোভ দমনের চেষ্টা করে যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ১৭ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত একটি বড় বিক্ষোভ।
এসব ঘটনার পর, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নেতৃত্ববৃন্দ সাধারণ বিক্ষোভ এবং ঢাকা ও অন্যান্য শহরে সম্পূর্ণ বন্ধের ডাক দেয় যা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং জামায়াতে ইসলামীর সমর্থন লাভ করে। এর প্রতিক্রিয়ায়, তৎকালীন সরকার বিক্ষোভকারী এবং প্রতিবাদ সংগঠকদের বিরুদ্ধে আরও সহিংস হয়ে উঠে। এ কারণে জনজীবন, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ, স্বাধীনতা এবং ব্যক্তির নিরাপত্তা লাভের অধিকার লঙ্ঘিত হয়। র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এবং পুলিশের হেলিকপ্টার আকাশ থেকে বিক্ষোভকারীদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করে। পুলিশ, র্যাব এবং বর্ডারগার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মাঠে সামরিক রাইফেল এবং লোড করা শটগানের প্রাণঘাতী ছররাগুলি ছুড়ে, সেইসাথে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে কম প্রাণঘাতী অস্ত্র মোতায়েন করে। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে কেউ কেউ রাস্তা বন্ধ এবং কিছু স্থাপনা ভাঙ্গচুরের চেষ্টা করে। কিন্তু তখন পর্যন্ত সামগ্রিকভাবে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ চলে আসছিল। এই ধরনের হামলার বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার জন্য, কিছু বিক্ষোভকারী পালাক্রমে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও লাঠিসোটা ব্যবহার করে।
এই ক্রমঅবনতিশীল পরিস্থিতি এবং রাষ্ট্রীয় সহিংসতার প্রতিক্রিয়ায় বিক্ষোভকারীদের কিছু অংশ সহিংস কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে যাদের বেশিরভাগ সরকারি ভবন, পরিবহন অবকাঠামো এবং পুলিশকে লক্ষ্য করে আক্রমণ করে। ১৮ জুলাই সন্ধ্যায় সরকার বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী বল প্রয়োগের জন্য নিরাপত্তা বাহিনী জোরদার করার নির্দেশনা প্রদান করে। ১৯ জুলাই থেকে বিক্ষোভ শেষ হওয়া পর্যন্ত, বিজিবি, র্যাব এবং পুলিশ ঢাকা এবং অন্যত্র বিক্ষোভকারীদের উপর নির্বিচারে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে, যার কারণে প্রতিবাদ কভার করতে আসা সাংবাদিকসহ অনেকে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয় এবং আহত হয়। কিছু ক্ষেত্রে, নিরাপত্তা বাহিনী উদ্দেশ্যমূলকভাবে নিরস্ত্র বিক্ষোভকারীদের ওপর খুব কাছ থেকে গুলি ছুড়ে।
যাহোক, পুলিশ এবং আধাসামরিক বাহিনীর দ্বারা বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে সহিংস পথ অবলম্বন করে বিক্ষোভকারীদের দমাতে পারেনি, বিক্ষোভকারীদের ক্ষোভ আরও বেড়ে যায়। ২০ জুলাই, সরকার সাধারণ কারফিউ জারি করে এবং সেনাবাহিনী মোতায়েন করে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সৈন্যরা বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে ফাঁকা গুলি ছুড়ে যা বিক্ষোভকারীদের নিহত বা গুরুতর আহত হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি করেনি; কেবল একজন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। কিছু প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ থেকে জানা, ৩ আগস্ট সেনাপ্রধানের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত এক সভায় জুনিয়র সেনা অফিসারেরা বেসামরিক বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ প্রত্যাখানের জন্য চাপ দিতে থাকে; বিক্ষোভকারীদের উপর গুলি চালাতে তারা অস্বীকৃতি জানান।
তা সত্ত্বেও, সেনাবাহিনী আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের প্রতিরক্ষা সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে আরও সংহিস হতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তারা পাল্টা আক্রমণের আশংকা ছাড়াই বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী বল প্রয়োগের অনুমতি পায়। এর মধ্যে ২০ ও ২১ জুলাই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অবরোধের সময় পুলিশ এবং র্যাব গুলি ছুড়ার পূর্ণ ছাড়পত্র পায়। এতে নিহত ও আহতের ঘটনা ঘটে। জুলাইয়ের শেষের দিকে, সেনাবাহিনীও ব্যাপক অভিযানে অংশ নেয়, যেখানে পুলিশ এবং র্যাব গণবিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে নির্বিচারে বিপুল সংখ্যক মানুষকে গ্রেফতার করে। সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাক্ষ্য থেকে আরও জানা যায় যে ৫ আগস্ট বিক্ষেভকারীরা যে ঢাকা মার্চের ডাক দেয় তা শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে থামানোর জন্য সেনাবাহিনী, বিজিবি এবং পুলিশকে একটি সরকারি পরিকল্পনা তৈরিতে অংশ নিয়েছিল। সেই পরিকল্পনা অনুসারে, পুলিশ অনেক বিক্ষোভকারীকে গুলি করে হত্যা করে, কিন্তু সেনাবাহিনী এবং বিজিবি বৃহৎঅর্থে নিস্ক্রিয়ভাবে দাঁড়িয়েছিল এবং ফলে বিক্ষোভকারী নির্বিঘ্নে তাদের আন্দোলন চালিয়ে যেতে সক্ষম হন।
গোয়েন্দা সার্ভিসেস–ডিরেক্টরেট জেনারেল অব আর্মড ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স (ডিজিএফআই), ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স (এনএসআই) এবং ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) – এবং পুলিশের বিশেষ শাখা – গোয়েন্দা শাখা, বিশেষ শাখা এবং কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিটিসি)-প্রতিবাদকারীদের দমনের নামে সরাসরি মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিল। তারা গোপনীয়তার অধিকার লঙ্ঘন করে নজরদারির মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য এক সংস্থা থেকে আরেক সংস্থার সঙ্গে শেয়ার করে এবং জুলাইয়ের শেষের দিকে ব্যাপকহারে নির্বিচারে গ্রেফতারের স্বপক্ষে প্রচারণা চালায়। গোয়েন্দা শাখা বন্দীদের কাছ থেকে তথ্য ও স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য নিয়মিত ও নির্বিচারে আটক ও নির্যাতনের আশ্রয় নেয়। সিটিটিসি-এর সদর দপ্তর শিশুসহ নির্বিচারে আটককৃতদের বন্দি স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল। গোয়েন্দা শাখা এবং ডিজিএফআই যৌথভাবে ছাত্রনেতাদের সেখানে অপহরণ ও নির্বিচারে আটক করে এবং বলপ্রয়োগের মাধ্যমে বিক্ষোভকারীদের আন্দোলন থেকে সরে আসতে চাপ দেয়।
ডিজিএফআই, এনএসআই এবং গোয়েন্দা শাখার লোকজন আহতদের জীবনরক্ষাকারী চিকিৎসা সেবায বাধাগ্রস্ত করে, প্রায়শই হাসপাতালে রোগীদের জিজ্ঞাসাবাদ, আহত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার এবং চিকিৎসাকর্মীদের ভয়-ভীতি দেখাতে থাকে। এ পরিস্থিতি আইন সহায়তাকারী কর্তৃপক্ষ বা বিচার বিভাগ কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি যাতে নির্বিচারে আটক ও নির্যাতনের ঘটনা এবং অনুশীলনগুলি বন্ধ করা যায়। এ ধরনের কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনো কর্মকর্তার জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়নি।
গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও এই পদ্ধতিগত এবং সংগঠিত গুরুতর মানবধিকার লঙ্ঘনগুলো চাপা রাখার পক্ষ কাজ করে। এনটিএমসি মন্ত্রণালয়সমূহের নির্দেশ বাস্তবায়নে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের সাথে একত্রে কাজ করে যাতে বিক্ষোভকারীরা তাদের কর্মসূচি সংগঠিত করতে ইলেকট্রনিক যোগাযোগ ব্যবহারের সুযোগ না পায়। সহিংসতা সম্পর্কিত তথ্য ইন্টারনেট বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আদান-প্রদানের জনগণের অধিকার সংকুচিত করা হয়। একই সঙ্গে, ডিজিএফআই, এনএসআই এবং র্যাব মিডিয়া আউটলেটগুলিকে গণবিক্ষোভ এবং তাদের সহিংস দমন সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ এবং বস্তুনিষ্ঠ রিপোর্ট না করার জন্য মিডিয়ার ওপর চাপ দেয়। ডিজিএফআই পুলিশের সঙ্গে যোগ দিয়ে ভিকটিম, তাদের পরিবার এবং আইনজীবীদের নিরব হওয়ার ব্যাপারে ভয় দেখাতে থাকে।
ঘটনার সঙ্গে জড়িত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং অন্যান্য অভ্যন্তরীণ সূত্রের থেকে পাওয়া প্রত্যক্ষ সাক্ষ্যের ভিত্তিতে ওএইচসিএইচআর এ সিদ্ধান্তে পৌঁচ্ছে যে পুলিশ, আধাসামরিক, সামরিক এবং গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের পাশাপাশি আওয়ামীলীগের সাথে জড়িতরা সহিংস উপাদানগুলিকে ব্যবহার করে একটি সমন্বিত এবং নিয়মতান্ত্রিকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করে। রাজনৈতিক নেতৃত্বের পূর্ণ জ্ঞান, সমন্বয় এবং নির্দেশনার ভিত্তিতে এ সহিংসতা ঘটানো হয়। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা শাখার তৎপরতাগুলো সমন্বয় করতেন এবং নেতৃত্ব দিতেন। উভয়পক্ষ একাধিক সূত্র থেকে বাস্তবে কী ঘটছে সেই পরিস্থিতি সম্পর্কে নিয়মিত প্রতিবেদন পেতেন।
ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্তকর্তাদের সাক্ষ্য অনুসারে, ২১ জুলাই এবং আগস্টের শুরুতে প্রধানমন্ত্রীকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রতিবেদন সরবরাহ করতেন যেখানে বিশেষভাবে অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছিল। রাজনৈতিক নেতা এবং পুলিশ ও সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা সম্পর্কে বাস্তব ধারণা নিতে সাইট পরিদর্শন করেন। অধিকন্তু, রাজনৈতিক নেতৃত্ব, বিজিবি, র্যাব, ডিজিএফআই, পুলিশ এবং গোয়েন্দা শাখার দ্বারা পরিচালিত কার্যক্রমের অনুমোদন ও নির্দেশনা প্রদানের জন্য সরাসরি আদেশ এবং অন্যান্য নির্দেশনা জারি করে। এসকল বাহিনী প্রতিবাদকারী ও সাধারণ নাগরিকদের বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা এবং নির্বিচারে আটকের মতো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে।
২০২৪ সালের আগস্টের শুরুতে সাবেক সরকার পর্যায়ক্রমে দেশের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছিল। জনগণ প্রতিশোধমূলক হত্যাকাণ্ড এবং অন্যান্য গুরুতর প্রতিশোধমূলক সহিংসতায় যুক্ত হয়ে পড়ে; বিশেষ করে, আওয়ামী লীগের সমর্থক এবং আওয়ামী লীগের অনুগত সমর্থক, পুলিশ এবং মিডিয়াকে এ ধরনের সহিংসতার শিকার হয়।
বিক্ষোভের চলাকালে এবং পরে, হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন, আহমেদিয়া সম্প্রদায় এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীরা উৎশৃঙ্খল জনতা কর্তৃক সহিংস আক্রমণের শিকার হন। তাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া এবং কিছু উপাসনালয় আক্রমণ করা হয়। ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার ঘটনা ঘটে। জমিজমা সংক্রান্ত স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিরোধ, আন্তঃব্যক্তিক দ্বন্দ্ব এবং আওয়ামী লীগ সমর্থিত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ হতে থাকে। কিছু জামায়াতে ইসলামী ও বিএনপি সমর্থক এবং স্থানীয় নেতারাও প্রতিশোধমূলক সহিংসতা এবং স্বতন্ত্র ধর্মীয় ও আদিবাসী গোষ্ঠীর উপর হামলার সাথে জড়িয়ে পড়ে। যাহোক, ওএইচসিএইচআর-এর প্রাপ্ত তথ্যে এটা প্রতীয়মান হয়নি যে ঘটনাগুলো কেন্দ্রিয় নেতৃত্বের নির্দেশনায় সংগঠিতভাবে ঘটেছে বরং তারা সংখ্যালঘুদের প্রতি সহিংসতার নিন্দা করেছে।
৫ আগস্ট ২০২৪ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকার, নিরাপত্তা বাহিনী বা আওয়ামী লীগ সমর্থকদের দ্বারা সংঘটিত কোনো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং অপব্যবহারের ঘটনা তদন্ত বা জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং অপব্যবহারের জন্য জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিয়েছে। এর পদক্ষেপগুলির মধ্যে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) পাশাপাশি নিয়মিত আদালতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই উদ্যোগগুলো নানা কারণে বিঘ্নিত হচ্ছে যা ঘটছে মূলত আইন প্রয়োগকারী এবং বিচার বিভাগের আগের বিদ্যমান কাঠামোগত ঘাটতিগুলোর কারণে। পুলিশী অসদাচরণ যেমন গণমামলার ভিত্তিহীন অভিযোগ অভিযোগ আনা, কিছু নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের দ্বারা ক্রমাগত ভীতি প্রদর্শন এবং প্রমাণ জালিয়াতি। অনেক অভিযুক্ত কর্মকর্তা পূর্বের অবস্থানে রয়ে গেছে। আইসিটি ও অন্যান্য আদালদের ক্ষেত্রে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ নিয়ে উদ্বেগ দেখা যাচ্ছে। যদিও অন্তর্বর্তী সরকার স্বতন্ত্র ধর্মীয় ও আদিবাসী গোষ্ঠীর উপর হামলার ঘটনায় ১০০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে বলে জানিয়েছে। প্রতিশোধমূলক সহিংসতাসহ অন্যান্য অনেক অপরাধের সঙ্গে জড়িতরা এখনও দায়মুক্তি ভোগ করছে।
সরকারি ও বেসরকারি সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে ওএইচসিএইচআর-এর কাছে মনে হয়েছে এ বিক্ষোভ চলাকালে ১,৪০০ জনের মতো মানুষ নিহত হতে পারে, যাদের বেশিরভাগই বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী দ্বারা ব্যবহৃত প্রাণঘাতী অস্ত্র, সামরিক রাইফেল এবং শটগানের গুলিতে নিহত হয়। আরও হাজার হাজার গুরুতর আহতরা জীবনবদলে দেওয়ার মতো গুরুতর আঘাতের শিকার হয়েছেন। ওএইচসিএইচআরের নিকট পুলিশ ও র্যাব প্রদত্ত তথ্য অনুসারে ১১ হাজার ৭ শত জনেরও বেশি মানুষকে গ্রেফতার ও আটক করা হয়।
হতাহতের পরিসংখ্যান প্রমাণ করে যে নিহতদের মধ্যে প্রায় ১২-১৩ শতাংশ শিশু। পুলিশ এবং অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীও শিশুদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে। শিশুরা হত্যা, উদ্দেশ্যমূলকভাবে পঙ্গু, নির্বিচারে গ্রেপ্তার, অমানবিক পরিস্থিতিতে আটক, নির্যাতন এবং অন্যান্য ধরনের মন্দ আচরণের শিকার।
বিক্ষোভে প্রথম দিকের অগ্রভাগে থাকার কারণে নারী ও মেয়েরাও নিরাপত্তা বাহিনী এবং আওয়ামী লীগ সমর্থকদের দ্বারা হামলার শিকার হযন। তারা বিশেষভাবে যৌন ও লিঙ্গভিচসিত্তিক সহিংসতার শিকার হয়। যার মধ্যে রয়েছে লিঙ্গভিত্তিক শারীরিক সহিংসতা, ধর্ষণের হুমকি এবং কিছু নথিভুক্ত ঘটনার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের দ্বারা সংঘটিত যৌন নির্যাতন। ওএইচসিএইচআর প্রতিশোধমূলক সহিংসতা হিসাবে যৌন সহিংসতা এবং ধর্ষণের হুমকি সম্পর্কিত অভিযোগ পেয়েছে। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংবেদনশীলতা এবং বাংলাদেশে যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার সম্পর্কিত তথ্য কম আসার পরিপ্রেক্ষিতে, ওএইচসিএইচআর মনে করে যে এটি যৌন সহিংসতার সম্পূর্ণ তথ্য নথিভুক্ত করা সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে ভিকটিমদের পরিপূর্ণ সহায়তার জন্য এর প্রভাব অনুসন্ধানের আগামীদিনে এর গভীর অনুসন্ধান প্রয়োজন।
পুরানো আইন ও নীতি, দুর্নীতিগ্রস্ত শাসন কাঠামো এবং আইনের শাসনের অবক্ষযয়ের কারণে প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে নির্বিচারে শক্তির ব্যবহার হয়েছে। পুলিশের সামরিকীকরণ, নিরাপত্তা ও বিচার বিভাগের রাজনৈতিকীকরণ এবং প্রাতিষ্ঠানিক দায়মুক্তি প্রদান করা হয়েছে। সাবেক আওয়ামী সরকার শান্তিপূর্ণ নাগরিক ও রাজনৈতিক ভিন্নমত দমন করার জন্য ব্যাপকভিত্তিক আইনী ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর উপর নির্ভর করেছিল। এমন নিপীড়নমূলক পরিস্থিতির কারণে বিরোধীরাও সরকারের প্রতি বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠে প্রতিবাদ সহিংসতার দিকে ধাবিত হয়।
ওএইচসিএইচআর-এর ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং চলাকালে মানবাধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন এবং অপব্যবহারের অন্তর্নিহিত মূল কারণগুলির খুঁজে দেখা চেষ্টা করেছে, জরুরি ভিত্তিতে দীর্ঘমেয়াদী সংস্কারের ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করেছে যাতে একই ধরনের গুরুতর মানবাধিকারের লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো পুনরাবৃত্তি না ঘটে। এই লক্ষ্যে, ওএইচসিএইচআর এই প্রতিবেদনে অনেকগুলো পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করেছে, যার মধ্য রয়েছে নিরাপত্তা ও বিচার বিভাগের সংস্কার, দমনমূলক আইন ও নীতি বাতিল, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মান মানবাধিকার সঙ্গে সাজুয্য রেখে আইন সংশোধন, প্রাতিষ্ঠানিক ও শাসন খাতের সংস্কার, এবং বৃহত্তর রাজনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় বৃহত্তর পরিবর্তন যাকে করে বৈষম্য কামানো, সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত বাংলাদেশের সকল মানুষের জন্য মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা যায়।
এই ক্ষেত্রে সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ হবে ন্যায্য এবং স্বাধীন ন্যায়বিচার এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্তদে প্রতিকারের পদ্ধতি স্থির করা যা জাতীয় মানসিক নিরাময়কে প্রক্রিয়া সহায়তা করবে। এর অংশ হিসেবে ওএইচসিএইচআর একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতীয় সংলাপ এবং পরামর্শের মাধ্যমে একটি সামগ্রিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং বাস্তবতানির্ভর ক্রান্তিকালীন বিচার প্রক্রিয়ার সুপারিশ করছে। এ বিচার প্রক্রিয়া দাঁড় করানো লক্ষ্য হলো আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সাযুজ্যময় সবচেয়ে দায়ী অপরাধীরদের জন্য বিচার নিশ্চিত করা। এটি করা হবে ভিকটিমকেন্দ্রিক এক বৃহৎ অ্যাপ্রাচ অনুসরণের মাধ্যমে যা মানবাধিকার লঙ্ঘন সম্পর্কিত বিচার এবং সুরক্ষায় সহায়কে হবে। এ কাজটি করা হবে সত্যাসন্ধান, ক্ষতিপূরণ, স্মৃতিসংরক্ষণ, নিরাপত্তা সেক্টর কর্মকাণ্ড যাচাই-বাছাই, এবং অন্যান্য ব্যবস্থা যা পুনরাবৃত্তি রোধের নিশ্চয়তা দেবে। এই ধরনের উদ্যোগ সামাজিক সংহতি, জাতীয় নিরাময় এবং বিভিন্ন গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের পুনর্মিলনকে সহায়তা করবে।
ওএইচসিএইচআর দায়বদ্ধতা সমর্থন করার লক্ষ্যে প্রতিবাদের সাথে সম্পর্কিত লঙ্ঘন এবং অপব্যবহারের আরও স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ তদন্তের সুপারিশ করছে। ওএইচসিএইচআর এই প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুসরণ ও বাস্তবায়নের সুবিধাসহ বাংলাদেশকে অব্যাহত সহায়তা এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করতে প্রস্তুত।
ওএইচসিএইচআর ঘটনার ফলাফল এবং সুপারিশগুলো অনলাইনের মাধ্যমে ভুক্তভোগী ও অন্যান্য ২৩০ বাংলাদেশীর সাক্ষাৎকার গ্রহণের ভিত্তিতে তৈরি করেছে। সরকার, নিরাপত্তা বিভাগ এবং রাজনৈতিক দলের কর্মকর্তাদের আরও ৩৬টি সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে ঘটনা সংশ্লিষষ্ট সরেজমিন অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন অনেক প্রাক্তন এবং বর্তমান সিনিয়র কর্মকর্তারা রয়েছে। তথ্য-উপাত্তগুলো সত্যতা ভিডিও এবং ফটো, মেডিকেল ফরেনসিক বিশ্লেষণ এবং অস্ত্র বিশ্লেষণ এবং অন্যান্য তথ্য বিশ্লেষণ সাপেক্ষে তা নিশ্চিত করা হয়েছে। একটি ঘটনা বা অপরাধ ঘটেছে এবং তা বিশ্বাস করার মতো যুক্তিগ্রাহ্য কারণ আছে সেগুলোও ওএইচসিএইচআর অনুসন্ধান করা হয়েছে। একজনের অপরাধীর অপরাধ প্রমাণের জন্য এসব মান প্রমাণক হিসেবে ফৌজদারি কার্যধারায় অপরাধ প্রমাণের জন্য প্রয়োজনীয় মানদণ্ডের চেয়ে কম। তবে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের দ্বারা আরও ফৌজদারি তদন্তের প্রয়োজন রয়েছে।
