বাংলাদেশে রাজনৈতিক অধ:পতনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন শেখ হাসিনা
নিজস্ব প্রতিবেদক: Kanak Sarwarপ্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ৩০ মে, ২০২৪ এ ০৫:৫০ PM

ফ্রিডম হাউসের কলাম
বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্বাধীনতার নাটকীয় অধ:পতনে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ অনুপ্রবেশকারীদের মতো বিরোধী দল, সাংবাদিক এবং সুশীল সমাজের ওপর অত্যাচারের মাত্রা বাড়িয়েছে। সুশীল সমাজের নীতি নির্ধারকদের উচিত নতুন করে এক হয়ে নাগরিক স্বাধীনতার ক্ষেত্র প্রস্তুত করা।
গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে সোচ্চার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা ফ্রিডম হাউসের এক কলামে এই মন্তব্য করা হয়েছে। কলামটি লিখেছেন সংস্থাটির এশিয়া প্রোগ্রামসের সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার নায়লা রফিক।
পাঠকদের জন্য কলামটির অনুবাদ নীচে তুলে ধরা হলো:
বিগত এক দশকেরও বেশী সময় ধরে বাংলাদেশে রাজনৈতিক এবং নাগরিক স্বাধীনতার নাটকীয় অধ:পতনে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ। জনগণের প্রতিদিনের জীবন যাত্রায় ঠিক অনুপ্রবেশকারীদের মতো করে আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিরোধী দল, সাংবাদিক এবং সুশীল সমাজের ওপর অত্যাচারের মাত্রা বাড়িয়েছে, পশ্চাদপদ আইন জারি করে মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করেছে এবং অভ্যাসগতভাবে সরকার বিরোধী সমাবেশের বাধাগ্রস্থ করতে গলা চেপে ধরার মতো করে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছন্ন করে দিচ্ছে। এসব নির্যাতনের ঘটনার কারণে ২০১৪ সাল থেকে ফ্রিডম হাউসের 'ফ্রিডম ইন দ্য ওয়াল্ড' এবং 'ফ্রিডম ইন দ্য নেট' এই দুই সূচকেই অন্তত ১০ ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ।
এই নির্যাতনমূলক পরিবেশের মধ্যেই ভোট জালিয়াতির মাধ্যমে ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে চতুর্থ বারের মতো ক্ষমতায় এসেছেন শেখ হাসিনা। নির্বাচনে কারচুপির ঘটনাগুলোর বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ রয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার সম্পূর্ণ ভিন্ন কায়দায় তার সমালোচকদের ওপর আক্রমণের মাত্রা ক্রমান্বয়ে বাড়িয়েছে। আর এ কারণে দেশটির দৃশ্যমান ভঙ্গুর গণতন্ত্রের উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হচ্ছে এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের কাজ করার রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। আওয়ামী লীগের আরও ৫ বছর মেয়াদে কীভাবে কার্যকর পরিবর্তন আনা যায় সে বিষয়ে কাজ করাটা গুরুত্বপূর্ণ। তিন জায়গায় বাংলাদেশের মানবাধিকার আর আইনের শাসনের দ্রুত অবনতি ঘটছে এবং এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসার পথ খোঁজা দরকার।
ভয় এবং সেল্ফ সেন্সরশীপের সংস্কৃতি
বাংলাদেশে সাইবার সিকিউরিটি আইন জারি করে খুব বাজেভাবে অনলাইনে মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করা হয়েছে। এছাড়া কালাকানুন ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের নিয়ন্ত্রণ এবং নজরদারিমূলক অনেক আইন এতে পুনরায় যোগ করা হয়েছে। সরকারের সমালোচনা হচ্ছে এমন অভিযোগ তুলে বিগত বছরগুলোতে হাজার হাজার মানুষকে এই আইনে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই আইনগুলোর মাধ্যমে ২০১৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত সাংবাদিক এবং লেখকসহ প্রায় ৪,০০০ মানুষের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের ৪০ শতাংশ বিরোধী দল বিএনপি সমর্থিত সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক কর্মী। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের প্রাণঘাতি অস্ত্রের অপব্যবহার নিয়ে ফ্যাক্ট বেইজড রিপোর্ট প্রকাশ করার জেরে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ২ সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং মানবাধিকার কর্মীর বিরুদ্ধেও মামলা হয়েছে।
এখানে উল্লেখ করার মতো বিষয় হচ্ছে ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের চরম উত্তেজনাকর নির্বাচন পূর্ব পরিস্থিতিতে ডিএসএ এবং সিএসএ আইন দুটি জারি করা হয়েছিলো। দুটি আইন জারি করার সময় দেখা গেছে যে, প্রতিশোধ এড়াতে সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী এবং অন্যরা এসব আইনের ভয়ে সেল্ফ সেন্সরশীপ আরোপ করেছে। এই প্রতিষ্ঠিত ভয়ের সংস্কৃতির কারণেই ২০২৪ সালে মুক্ত রাজনৈতিক চর্চার পরিবেশ খর্ব করেছে।
সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট অনুসারে সরকার চাইলেই অনলাইনের যেকোনো কন্টেন্ট অপসারণ বা বন্ধ করে দিতে পারে। গণমাধ্যমগুলোকে অব্যাহতভাবে সেল্ফ সেন্সরশীপ আরোপে বাধ্য করা হচ্ছে এবং নিউজ ওয়েবসাইট থেকে রিপোর্ট সরাতে বাধ্য করছে সরকার।
দেশের বাইরে নির্যাতন
মানবাধিকার কর্মীদের নির্যাতনে দেশের বাইরে বিদেশেও তাদের হয়রানি এবং ভীতি প্রদর্শন করছে সরকার। আন্ত:দেশীয় নির্যাতনের বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করে সরকারের কর্মকর্তারা বিদেশে অবস্থানরত সরকারের সমালোচকদের নির্যাতন করতে সহিংসতা এবং হয়রানিমূলক আচরণ করছে। শেখ হাসিনার ভাষ্যমতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বিভ্রান্ত করতে কেউ যেন রাষ্ট্র বিরোধী প্রচারণা চালাতে না পারে সেজন্য সতর্ক থাকতে বিদেশে অবস্থানরত রাষ্ট্রদূতদের ২০২৩ সালের জুলাই মাসে নির্দেশনা দেন। দেশের বাইরে সমালোচকদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইনকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অপব্যবহার করছে সরকার। ফ্রিডম হাউসের তথ্যমতে, বাংলাদেশ হলো ৩৮ দেশের মধ্যে একটি যে দেশ আন্ত:দেশীয় নির্যাতনের শিকারী দেশ হিসেবে পরিণত হয়েছে।
সুশীল সমাজের প্রতিনিধিত্বকারী সংস্থাগুলোকে টার্গেট করা
নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে কৌশলে বিভিন্ন এনজিও এর প্রভাব কমাতে এবং কার্যক্রম বাধাগ্রস্থ করতে বাংলাদেশ এনজিও অ্যাফেয়ার্স ব্যুরো প্রজেক্টের অনুমোদন এবং ফান্ডিং বন্ধ করে দিয়েছে। মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা কিছু স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক এনজিও অভিযোগ করেছে যে, গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নিয়মিতভাবে তাদের ওপর নজরদারি করছে। প্রজেক্ট রেজিস্ট্রেশন বিলম্বিত করা, জব্দ করার চিঠি ইস্যু করা এবং ভিসা না দেওয়া--এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক এনজিওগুলোর কার্যক্রমে বাধা দিচ্ছে সরকার। গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশাসনিক কাজ এবং মানবাধিকার ইস্যুতে এনজিওগুলোর ফান্ড আটকে রেখেছে ব্যাংক। এই দীর্ঘসূত্রিতার কারণে নিজেদের কাজের পরিধি সীমিত করে নিয়েছে অনেক স্থানীয় এনজিও। আর এর প্রভাব পড়ছে এনজিওগুলোতে দাতারা অর্থায়নে। এমনকি ক্ষমতাসীন দলের সমর্থিত সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা অভিযোগ করেছেন যে, জনসম্মুখে ক্ষমতাসীন দলের নীতির সমালোচনা করায় গ্রেফতারের হুমকি পাচ্ছেন।
এনজিওগুলোর ওপর এই দমনের কারণে বাংলাদেশের মানবাধিকার এবং শাসন ব্যবস্থা নিয়ে জাতীয়ভাবে যেসব আলোচনার দরকার সে ক্ষেত্রে চরম অবনতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। এর ফলে দেশটিতে কী ঘটছে তা জানার সুযোগ পাচ্ছেনা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। এই ধারাবাহিকতার রেশ ধরে দেশটিতে মানবাধিকার নিয়ে উদ্বেগের জায়গাগুলো কীভাবে কাজ করা হচ্ছে এবং বর্তমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যেসব পরামর্শ দিয়েছে তা কার্যকর হচ্ছৈ কীনা সে বিষয়ে ভুল বোঝাবুঝির ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে।
ভবিষ্যতে যে পরিকল্পনা নেয়া যায়
সুস্থ গণতন্ত্র এবং সরকারে আস্থা ফিরিয়ে আনতে অংশীদারদের উচিত তাদের ক্ষমতা দিয়ে সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা যাতে করে সরকার পুনরায় সংস্কারে বাধ্য হয় এবং অধিকতর স্বচ্ছতার সঙ্গে মানবাধিকারের চ্যালেঞ্জসমূহ নিয়ে কাজ করে। প্রথমত, আওয়ামী লীগ সরকারকে সিএসএ এর বিতর্কিত ধারাগুলো সংস্কার করতে হবে এবং এটা নিশ্চিত করতে হবে যে, দেশের জারি করা আইন যেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তির যেসব প্রতিশ্রুতি রয়েছে তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়।
অন্তবর্তী পদক্ষেপ হিসাবে যেসব মামলার বিচার এখনো বাকি রয়েছে সেগুলোর দ্রুত, স্বচ্ছ এবং ন্যায়সঙ্গতভাবে বিচারের ব্যবস্থা করে দেশটির কর্মকর্তাদের উচিত আস্থা ফিরিয়ে আনা। আর এর জন্য তাদেরকে পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে। এটা না করা হলে বাংলাদেশের জনগণ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহের ওপর তাদের আস্থা হারাবে এবং এর ফলে রাষ্ট্রের কর্মকর্তারা জবাবদিহিহীনতার অধিকতর স্বাধীনতা পেয়ে যাবে।
দ্বিতীয়ত, সুশীল সমাজের স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিদেরকে মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়ন এবং সংস্কারে চাপ অব্যাহত রাখতে হবে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বকে নিজেদের মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন এনে স্বচ্ছতা, ভিন্নমতের প্রতি সহিষ্ণুতা, উদারতা, রাজতন্ত্র থেকে বের হয়ে নেতৃত্বে ভিন্ন চিন্তার সুযোগ করে দিতে হবে। এটা করতে পারলে তাদের সমর্থন বাড়বে, আন্তর্জাতিক শাস্তি এবং চাপ কমবে, নতুন মেয়াদে যে পরিবেশ তৈরির দরকার তার ক্ষেত্র প্রস্তুত হবে এবং এমনকি ভিন্নমতের নাগরিকদের নিজেদের সমর্থনের জন্য আকৃষ্ট করতে পারবে। সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিসরে কথা ভাবা উচিত।
আরও স্বচ্ছ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসনের জন্য সুশীল সমাজের উচিত সরকারকে প্রয়োজনীয় সুপারিশ করা এবং আন্তর্জাতিক সেরা কার্যক্রমের বিষয় উপস্থাপন করা। সুপারিশের মধ্যে রয়েছে সিএসএ এর সংস্কার, নতুন এবং বৃহৎ পরিসরের পদক্ষেপের মাধ্যমে বিচারব্যবস্থার ন্যায্যতা এবং স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। সরকারের কাছ থেকে কোনো ধরনের বাজে আচরণের আশংকা ছাড়াই তাদেরকে এ কাজে ভূমিকা রাখার সুযোগ করে দিতে হবে।
শেষ কথা হচ্ছে, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তাদের দাবি এবং অনুসন্ধানের বিষয়ে অধিকতর পরিকল্পনা নিয়ে এগুতে হবে। উদাহরণ হিসাবে বলতে হয়, যখন কোন দেশ ম্যাগনিটস্কি হিউম্যান রাইটস অ্যাকাউন্টেবিলিটি অ্যাক্টের অধীনে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে চায় তখন সে দেশের উচিত বর্তমান নেতৃত্বসহ এমন ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানকে টার্গেট করা যারা স্পষ্টভাবে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। এর বাইরে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং কর্মীদের ওপর সরকারের নির্যাতনের বিষয়ে নিয়মিত নজরদারি এবং রিপোর্ট প্রকাশ অব্যাহত রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ। এর সঙ্গে থাকতে হবে ভবিষ্যত পরিকল্পনা। এ ধরনের পদক্ষেপসমূহে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব প্রভাবিত হবে কীনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকার পরও, বিশেষ করে তাদের পিছনে ভারত এবং চীন সরকারের অব্যাহত সমর্থন রয়েছে, এসব যাই থাকুক না কেন পদক্ষেপসমূহ হলো গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার।
একদিকে, নির্বাচন যেমন অনিশ্চয়তার এক পরিবেশ তৈরি করেছে অন্যদিকে, এটি পদক্ষেপ গ্রহণের সুযোগও সামনে এনেছে। সরকারের উচিত ক্রমাগত সংস্কার পদক্ষেপে মনযোগ দেওয়া এবং সুশীল সমাজের নীতি নির্ধারকদের উচিত নতুন করে এক হয়ে নাগরিক স্বাধীনতার ক্ষেত্র প্রস্তুত করা।
Related News

কল্যাণ রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ার মহান স্বপ্ন নিয়ে কাজ করছে জামায়াত -ডা. শফিকুর রহমান
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের দুর্বল অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। কোন ভয়-ভীতির তোয়াক্কা না করে সংগঠনের কাজকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আল্লাহ দ্বীনকে বিজয়ী করতে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। আমাদের দাওয়াত হচ্ছে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনকে এক রব এবং রাসুলকে (সা) আমাদের নেতা মানার দাওয়াত। কুরআন ও সুন্নাহ’র আলোকে বাংলাদেশে একটি কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মহান স্বপ্ন নিয়ে জামায়াত কাজ করছে। ইনশাআল্লাহ আমরা এই কাজে একদিন সফল হব।’
সোমবার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরী আয়োজিত থানা ও ওয়ার্ড দায়িত্বশীল শিক্ষাশিবির-২০২৪-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য, চট্টগ্রাম মহানগরী আমির ও সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য, চট্টগ্রাম মহানগরী সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল আমিনের সঞ্চালনায় শিক্ষাশিবিরে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, মাওলানা আবদুল হালিম ও মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আমিরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘দায়িত্বশীলদের অনুপ্রেরণা প্রদান করে টিমস্পিরিটের মাধ্যমে সকলকে নিয়ে সংগঠনকে আরো মজবুত করতে হবে। সংগঠনের থানা ও ওয়ার্ড অর্থাৎ স্থানীয় কার্যক্রম যত বেশি শক্তিশালী হবে, সামগ্রিকভাবে মহানগরী ও কেন্দ্রীয় সংগঠন ততো সুদৃঢ় হবে। যেখানে যত বেশি বিপর্যয় এসেছে সেখানে দ্বীনের দাওয়াত আরো ব্যাপকতর হয়েছে। ফলে কোনো ষড়যন্ত্র ও রাজনৈতিক বাঁধা দেখে ভয় পাওয়া বা হতাশ হওয়া অথবা কাজ কমিয়ে দেয়া ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের জন্য উচিৎ নয়।’
তিনি বলেন, ‘মানবজীবনের এমন কোনো সমস্যা নেই যার সমাধান ইসলামে দেয়া হয়নি। মানবজাতির জন্য সব ধরনের সমস্যার সমাধান হলো আল কুরআন। আমাদের প্রত্যেককে পবিত্র কুরআনের বিধান অনুযায়ী নিজেদের জীবনকে সাজাতে হবে। এজন্য আমাদের প্রত্যেককে প্রতিদিন বেশি বেশি কুরআন, হাদীস ও ইসলামী সাহিত্য অধ্যয়ন করা দরকার। একই সাথে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছাতে হবে প্রতিটি ঘরে ঘরে। তাহলেই ইসলামের বিজয় অনিবার্য হয়ে উঠবে।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘যোগ্যতা যাদের আছে আল্লাহ তায়ালা নেতৃত্ব তাদের হাতেই দেন। এটাই আল্লাহর বিধান। নিজেদেরকে জনগণের খেদমতের জন্য তৈরি করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করাই বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী তার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।’
সভাপতির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য, চট্টগ্রাম মহানগরী আমির ও সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরী বলেন, ‘তৃণমূল পর্যায়ে আমাদেরকে সংগঠন মজবুতির দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। মনে রাখবেন, সংগঠন মজবুত থাকলে যেকোনো সময়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন সম্ভব। পাশাপাশি এই সেশনে সকল বিভাগের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সকল নেতাদেরকে সচেষ্ট হতে হবে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকরা কেন ঢুকবে, প্রশ্ন ওবায়দুল কাদেরের
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, পৃথিবীর কোন দেশে সেন্ট্রাল ব্যাংকে ঢুকতে পারছে অবাধে? কোন দেশে? ভারতের ফেডারেল ব্যাংকে কেউ কি অবাধে ঢুকতে পারছে? কেন ঢুকবে? ওয়েবসাইটে সব আছে। আপনার জানবার বিষয়, আপনি ভেতরে ঢুকবেন কেন?
শনিবার দুপুরে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার থেকে এখন ১৩ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসায় সরকার উদ্বিগ্ন কি- এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, আপনাকে কে বললো ১৩ বিলিয়ন ডলার? ‘নিউজে বলছে’- সাংবাদিকদের এমন উত্তরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আপনাকে কোন নিউজে বলছে? আমাদের কাছে হিসাব আছে। এসময় সাংবাদিকরা বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরই বলেছেন- ব্যবহার করার মতো ১৩ বিলিয়ন ডলার আছে। তখন ওবায়দুল কাদের বলেন, গভর্নর কে তাহলে জিজ্ঞেস করুন, কী কারণে এই পর্যায়ে এলো এটা? এটা তো আমরা জানি না। আমরা জানি, ১৯ থেকে ২০ বিলিয়ন ডলার, এর মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর আমরা কয় বিলিয়ন ডলার নিয়ে যাত্রা শুরু করেছি। আমাদের ডলার ছিল? বিএনপি কয় বিলিয়ন ডলার রেখে গেছে? ৩ বিলিয়ন প্লাস। তাহলে এখন ১৯-২০ বিলিয়ন ডলার আছে, এটা কী কম নাকি? রপ্তানি আয় এখন আমাদের বাড়ছে, রেমিট্যান্সও বাড়ছে এই মুহূর্তের যে প্রবণতা। এগুলো বাড়লে রিজার্ভও বাড়বে।

বিএনপি নেতা ইশরাক কারাগারে
পল্টন থানার নাশকতার মামলায় আত্মসমর্পণ করে কারাগারে গেলেন বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেন।
রোববার (১৯ মে) ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আস-সামছ জগলুল হোসেন এ আদেশ দেন।
এ মামলায় উচ্চ আদালত থেকে জামিনে ছিলেন ইশরাক। আজ আদালতে হাজির হয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে জামিন বর্ধিত করার আবেদন করেন তিনি। শুনানি শেষে আদালত তার জামিন বাড়ানোর আবেদন বাতিল করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

নিজেদের স্বার্থেই ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব দরকার: ওবায়দুল কাদের
Advertisement
নিজেদের স্বার্থেই ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখা দরকার বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘আমরা ভারতের বন্ধু। এটা আমাদের স্বার্থেই দরকার। আমরা কারও দাসত্ব করি না। ভারতের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক।’
শনিবার বিকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের গজনবী সড়কে আয়োজিত আওয়ামী লীগের শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ এ সমাবেশের আয়োজন করে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে বিএনপি যে শত্রুতা করেছিল, তাতে লাভ হয়নি। শত্রুতার কারণে সংশয়, সন্দেহ, অবিশ্বাস জন্মেছিল। শেখ হাসিনা সব সংশয়, সন্দেহ, অবিশ্বাস ভেঙে দিয়েছেন। ভারত এখন আমাদের বন্ধু।’
সমাবেশে বিএনপি নেতাদের উদ্দেশ্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি নেতারা হঠাৎ চাঙা হয়ে গেছেন। এর কারণ ডোনাল্ড লু বাংলাদেশ সফরে আসছেন। তারা আবার ক্ষমতার স্বপ্নে বিভোর। লু আসছেন সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিতে। বিএনপির স্বপ্নপূরণের জন্য নয়।
গতকাল নয়াপল্টনে বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের বক্তৃতাকে ‘মিথ্যাচার’ উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, গয়েশ্বর কোথায় ছিলেন এত দিন? কোথা থেকে এলেন, কোথায় পালিয়ে ছিলেন? মাথায় তো দেখি গান্ধী টুপি। বিএনপি এখন ভণ্ডামি শুরু করেছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, দালালি কারা করে, সেটা সবার জানা। মোদির (ভারতের প্রধানমন্ত্রী) নির্বাচিত হওয়ার দিন, সকালে বন্ধের দিন দূতাবাসে বিএনপির নেতারা ফুল, মিষ্টি নিয়ে হাজির হয়েছিল। তাহলে দালাল কারা? খালেদা জিয়া ভারত সফরে গিয়ে গঙ্গার পানিবণ্টনের কথা ভুলে গিয়েছিলেন। দেশে ফেরার পর সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করলে তিনি বললেন, গঙ্গার পানি চুক্তির বিষয়টি তিনি নাকি ভুলেই গিয়েছিলেন। তাহলে দালাল কারা?
ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘নির্বাচনের আগে বিএনপি নেতাদের দেখলাম, তারা হাসিখুসি। ভারতের আপ্যায়নে, ডিনার খেয়ে বিএনপি নেতারা হাসিখুশি ছিল। ক্ষমতার স্বপ্নেও বিভোর ছিল। কিন্তু দেশের মানুষ তো ৪২ শতাংশ ভোট দিয়ে শেখ হাসিনাকে আবার ক্ষমতায় বসিয়েছে। তিনি বলেন, এখন বিএনপি বলছে, জনগণ উপজেলা নির্বাচন নাকি প্রত্যাহার করেছে। তাহলে ৩৬ থেকে ৪০ শতাংশ ভোটার, যারা ভোট দিল, তারা কারা? আসলে দেশের মানুষ শেখ হাসিনার সততায়, উন্নয়নে এবং অর্জনে মুগ্ধ। তাই দেশের মানুষ শেখ হাসিনাকেই বেছে নিচ্ছে৷’
বিএনপি নানা সময় নানা নাটক করে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, একসময় জজ মিয়ার নাটক করল, নির্বাচনের আগে করল মিয়া আরেফির নাটক। তিনি বলেন, আবারও বিএনপির বিরুদ্ধে খেলা হবে। জনগণের জানমাল সুরক্ষায়, অপশক্তির বিরুদ্ধে খেলা আবারও হবে। প্রস্তুত থাকেন, এমন শিক্ষা দেব, পালাতে পালাতে অলিগিলি পার হয়ে বুড়িগঙ্গার পচা পানি খাবে।
বর্তমানে বৈশ্বিক নানা পরিস্থিতির কারণে দেশে চলমান কিছু সাময়িক সংকট দ্রুত কেটে যাবে বলে উল্লেখ করেন ওবায়দুল কাদের।
সমাবেশে সঞ্চালনা করেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান। মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, কামরুল ইসলাম, আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বিপ্লব বড়ুয়া, ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম, ঢাকা-১৪ আসনের সংসদ সদস্য মাইনুল হোসেন খান প্রমুখ।
