আজিজ যেভাবে খুনী ভাইদের রক্ষা করেছিলেন
নিজস্ব প্রতিবেদক: Kanak Sarwarপ্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২৩ মে, ২০২৪ এ ১২:৪৫ AM

সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে লেফটেন্যান্ট জেনারেল আজিজ আহমেদ দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন ২০১৮ সালের ২৫ জুন। ২০২১ সালের ২৩ জুন পর্যন্ত সময়ে তিনি সেনাপ্রধানের দায়িত্বে ছিলেন।
দুর্নীতিতে সম্পৃক্ততার অভিযোগে গতকাল সোমবার সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এর ফলে আজিজ আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে অযোগ্য হয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, আজিজ আহমেদ তার ভাইকে বাংলাদেশে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য জবাবদিহি এড়াতে সহযোগিতা করেন। এটা করতে গিয়ে তিনি নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন। এ ছাড়া অন্যায্যভাবে সামরিক খাতে কন্ট্রাক্ট পাওয়া নিশ্চিত করার জন্য তিনি তার ভাইয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন। তিনি নিজের স্বার্থের জন্য সরকারি নিয়োগের বিনিময়ে ঘুষ নিয়েছেন।

সেনাপ্রধান থাকাকালীন সময়েই আজিজ আহমেদের এ সব কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রথম আলোসহ দেশ–বিদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে অসংখ্য সংবাদ ছাপা হয়েছিল। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
সন্ত্রাসী জোসেফের সাজা মওকুফের আবেদন থেকে শুরু করে দেশত্যাগ পর্যন্ত অসংখ্য সংবাদ প্রকাশ করেছে প্রথম আলো। খুনের দুই মামলা: হারিছ, আনিসের সাজাও মাফ করেছে সরকার–শিরোনামে সংবাদটি ছাপা হয়েছিল ২০২১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি।
বহুল আলোচিত দুই সহোদর হারিছ আহমেদ ও আনিস আহমেদের সাজা মওকুফ করেছে সরকার। হারিছ দুটি এবং আনিস একটি খুনের মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি ছিলেন। ২০১৯ সালের ২৮ মার্চ তাদের সাজা মওকুফের প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
কাতার ভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল আল–জাজিরায় প্রচারিত অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন তথ্যচিত্রে এই দুই ভাইকে পলাতক আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়। বাংলাদেশেও গতকাল পর্যন্ত সবাই জানত তারা সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি। তবে প্রথম আলোর অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে সম্পূর্ণ ভিন্ন তথ্য।
জার্মানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভীকে তাদের টক শো কনফ্লিক্ট জোনে আমন্ত্রণ জানায়। সেখানে এই দুই পলাতক সহোদরের বাংলাদেশে প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণসহ নানা বিষয় উঠে আসে।
হারিছ আহমেদ ও আনিস আহমেদ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের ভাই। তাদের আরেক ভাই তোফায়েল আহমেদ ওরফে জোসেফও খুনের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ছিলেন। রাষ্ট্রপতির বিশেষ ক্ষমায় কারামুক্ত হন তিনি। জোসেফের সাজা মাফ করার জন্য আবেদন করেছিলেন তার মা রেনুজা বেগম। হারিছ ও আনিসের জন্য কে, কখন, কীভাবে আবেদন করেছেন, সে তথ্য এখনো পরিষ্কার হয়নি। জেনারেল আজিজ আহমেদের আরেক ছোট ভাই টিপু আহমেদ ১৯৯৯ সালে প্রতিপক্ষের হাতে খুন হয়েছিলেন।

জেনারেল আজিজ আহমেদ ২০১৮ সালের ২৫ জুন সেনাপ্রধান নিযুক্ত হন। এর এক মাস আগে ২০১৮ সালের ২৭ মে সাজা মওকুফের পর ছাড়া পান জোসেফ। আর ৯ মাস পর হারিছ আহমেদ ও আনিস আহমেদের সাজা মওকুফের প্রজ্ঞাপন জারি হয়। হারিছ আহমেদ ও আনিস আহমেদের যাবজ্জীবন সাজা মাফ করা হয়েছে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারার ক্ষমতাবলে। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১(১) উপধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি কোনো অপরাধের জন্য দণ্ডিত হলে সরকার যেকোনো সময় বিনা শর্তে বা দণ্ডিত ব্যক্তি যে শর্ত মেনে নেয়, সেই শর্তে তার দণ্ডের কার্যকারিতা স্থগিত বা সম্পূর্ণ দণ্ড বা দণ্ডের অংশবিশেষ মওকুফ করতে পারে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, যেদিন মন্ত্রণালয় থেকে সাজা মওকুফের প্রজ্ঞাপন জারি হয়, সেদিনই ঢাকার পৃথক দুটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে তার অনুলিপি পাঠানো হয়। এই দুটি বিচারিক আদালত আসামিদের সাজা দিয়েছিলেন। আদালত–সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রজ্ঞাপন পাওয়ার পর হারিছ আহমেদ ও আনিস আহমেদের নামে থাকা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বিনা তামিলে ফেরত পাঠানোর জন্য মোহাম্মদপুর ও কোতোয়ালি থানাকে আদেশ দেন আদালত।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে ষড়যন্ত্রমূলক, পরিকল্পিত, সাজানো ও বানোয়াট মামলায় যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত হারিছ আহমেদ ও আনিস আহমেদের যাবজ্জীবন সাজা ও অর্থদণ্ড ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারার ক্ষমতাবলে মওকুফ করা হয়েছে।
এই প্রজ্ঞাপনের অনুলিপি তখন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব, আইনসচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর একান্ত সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষাসেবা বিভাগের সচিবকে পাঠানো হয়। পাশাপাশি আসামি হারিছ আহমেদ, আনিস আহমেদ ও তাদের মা রেনুজা বেগমকেও প্রজ্ঞাপনের অনুলিপি পাঠানো হয় বলে জানা গেছে। সরকারের এতগুলো দপ্তরে প্রায় দুই বছর আগে এই প্রজ্ঞাপনের অনুলিপি গেলেও এত দিন তা গোপন ছিল।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, পলাতক কোনো ব্যক্তি কখনো কোনো ধরনের আইনি সুযোগ-সুবিধা এবং অধিকার ভোগ করতে পারে না। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় পলাতক কারও সাজা মওকুফ করা হলে তা সম্পূর্ণ বেআইনি হবে। এটা আইনের স্পষ্ট বিধান। তিনি বলেন, যদি কেউ এই আইনের বিধান লঙ্ঘন করে সাজা মওকুফের ব্যবস্থা করেন, তাহলে তার বা তাদের বিরুদ্ধেও আইন অনুযায়ী বিভাগীয় ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া যায়। কারণ, পলাতক আসামির দণ্ড মওকুফ করার অর্থ ক্ষমতার বেআইনি ব্যবহার ও অপপ্রয়োগ।
তবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় সাজা মওকুফের জন্য কোনো আসামিকে উপস্থিত থাকতে হবে, এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।
গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ পুলিশের ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা গেছে, ‘ওয়ান্টেড (পলাতক)’ আসামির তালিকায় হারিছ আহমেদের নাম আছে।
মোস্তাফিজ খুনের দায়ে সাজা পান হারিছ, আনিস ও জোসেফ
মোহাম্মদপুরের ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমানকে ১৯৯৬ সালের ৭ মে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় হারিছ আহমেদ, আনিছ আহমেদ, তোফায়েল আহমেদ ওরফে জোসেফসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২০০৪ সালের ২৫ মে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৩ মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে জোসেফ ও মাসুদ নামের এক আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। আর পলাতক আসামি হারিছ আহমেদ, আনিস আহমেদসহ তিনজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
মামলার নথি অনুযায়ী, বিচারিক আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে কারাগারে থাকা জোসেফ হাইকোর্টে আপিল করেন। হারিছ আহমেদ ও আনিস আহমেদ পলাতক থাকায় তারা আপিলের সুযোগ পাননি। অবশ্য ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিলের শুনানি শেষে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ২০০৭ সালের ২০ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট রায় দেন। রায়ে তোফায়েল আহমেদ জোসেফ ও আরেক আসামি কাবিলের সাজা বহাল রাখা হয়। কিন্তু মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মাসুদ খালাস পান।
হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন জোসেফ ও কাবিল। বর্তমান সরকারের সময় ২০১৫ সালের ৯ ডিসেম্বর রায় দেন আপিল বিভাগ। তাতে জোসেফের সাজা কমিয়ে মৃত্যুদণ্ড থেকে যাবজ্জীবন করা হয়। আর খালাস পান কাবিল। পরের বছর ২০১৬ সালে জোসেফের পক্ষ থেকে তার মা সাজা মওকুফ চেয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করেন। ২০১৮ সালে রাষ্ট্রপতি জোসেফের সাজা মওকুফ করে দেন এবং তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান। এই মামলায়ই ২০১৯ সালের ২৮ মার্চ হারিছ আহমেদ ও আনিছ আহমেদের সাজা মওকুফ করে সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করে।
আবু মোরশেদ খুনের দায়ে হারিছ ও জোসেফের সাজা
১৯৯৫ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ঢাকার জজকোর্ট প্রাঙ্গণে হামলার শিকার হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু মোরশেদ। তিনি ছাত্রদল কর্মী ছিলেন। ঘটনার দিন মোরশেদ একটি খুনের মামলায় হাজিরা দিতে জজকোর্টে যান। ঢাকার আইনজীবী ভবনের সামনে তাকে গুলি করা হয়। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাত দিন পর ২ অক্টোবর তিনি মারা যান।
এ ঘটনায় মোরশেদের বাবা আইনজীবী আজিজুল্লাহ ভূঁইয়া কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন। সেই মামলায় আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ১৯৯৭ সালের ১১ এপ্রিল হারিছ আহমেদ, তোফায়েল আহমেদ জোসেফসহ আটজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। পরের বছর সম্পূরক অভিযোগপত্রে আরও দুজনকে আসামি করা হয়। ১৯৯৯ সালের ৪ অক্টোবর ১০ আসামির বিচার শুরু হয়। ২০০৩ সালের ১০ আগস্ট মামলাটি বিচারের জন্য ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪–এ পাঠানো হয়।
নথিপত্রে দেখা যায়, শুনানিতে আত্মপক্ষ সমর্থনের সময় আসামিপক্ষ দাবি করে, নিহত মোরশেদ মোহাম্মদপুরের বাবু খুনের মামলার আসামি। একই মামলায় জোসেফসহ অন্যরা সাক্ষী ছিলেন। শত্রুতা করে তাদের মোরশেদ খুনের মামলায় জড়ানো হয়েছে।
তবে ১৯৯৫ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর চিকিৎসাধীন অবস্থায় ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে মৃত্যুকালীন জবানবন্দি দেন মোরশেদ। তাতে তিনি বলেন, ঢাকা আইনজীবী সমিতির বাইরের গেটে হারিছ, মামুন, মুন্না, প্যারিস ও শাহীন তাকে ঘেরাও করেন। জোসেফ ও মামুন তাকে গুলি করেন।
২০০৪ সালের ৩ মার্চ আদালত এ মামলার রায় দেন। তাতে জোসেফ ও তারিক সাইফ ওরফে মামুনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। হারিছ আহমেদ, ইসলাম ওরফে মুন্না, আশানুজ্জামান ওরফে প্যারিস ও শাহীনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। খালাস পান শোহেব, তপন, বাদল ও ফারুক আহমেদ। এই মামলায় আনিস আহমেদ আসামি ছিলেন না। আদালত রায়ে বলেছেন, নিহতের মৃত্যুকালীন জবানবন্দির সাক্ষ্যগত মূল্য বিবেচনাসহ অন্য সব সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে আসামির সাজা দেওয়া হয়।
এ মামলার রায়ের বিরুদ্ধেও হারিছ আহমেদ কোনো আপিল করেননি। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ২০১৯ সালের ২৮ মার্চের প্রজ্ঞাপনে হারিছ আহমেদের এই মামলার সাজাও মাফ করে দেওয়া হয়।
Related News

জলবায়ু তহবিল বাংলাদেশের ওপর ঋণের বোঝা বাড়াচ্ছে: টিআইবি
গত এক দশকে সবুজ জলবায়ু তহবিলের (গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড - জিএসএফ) ভূমিকা বেশ হতাশাজনক। অনুদানের বিপরীতে অধিক পরিমাণ ঋণ প্রদানের জন্য বাংলাদেশের মতো জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত দেশের ওপর ঋণ পরিশোধের বোঝা বাড়ছে।
মঙ্গলবার (১৪ মে) ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের ‘সবুজ জলবায়ু তহবিলে বাংলাদেশের মতো ঝুঁকিপূর্ণ দেশের অভিগম্যতা : সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
রাজধানীর ধানমন্ডিতে অবস্থিত টিআইবি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, জিএসএফে জবাবদিহিতা করার মতো অবকাঠামো নেই। নিজস্ব নীতিমালা লঙ্ঘন ও বৈষম্যমূলক আচরণ করছে প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগও রয়েছে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, বাংলাদেশর যে পরিমাণ অর্থ প্রয়োজন, জিএসএফের মাধ্যমে তার সিংহভাগ আসার কথা। জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো কোনো সুফল পাচ্ছে না। বরং তারা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছে অর্থায়ন বেশি করছে। যা একদমই গ্রহণযোগ্য নয়।
এদিন সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির গবেষক নেওয়াজুল মাওলা ও সহিদুল ইসলাম গবেষণার ফলাফল তুলে ধেরেন। গবেষণায় জানানো হয়, জিএসএফের ঋণের অর্থ বিদেশি মুদ্রায় সুদসহ ফেরত দিতে হয়। এতে ঋণগ্রহীতা দেশগুলোর বহিস্থ ঋণের চাপ বাড়ে। এ কারণে স্থানীয় মুদ্রার ওপর চাপ সৃষ্টিসহ জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক কি কোনো নিষিদ্ধ পল্লী, প্রশ্ন গয়েশ্বর রায়ের
বাংলাদেশ ব্যাংকে কেন সাংবাদিকেরা যেতে পারবেন না, সে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তার প্রশ্ন, বাংলাদেশ ব্যাংক কি কোনো নিষিদ্ধ পল্লী যে সাংবাদিকেরা ঢুকতে পারবেন না? এখন সাংবাদিকদেরই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তারা সেখানে ঢুকবেন কি ঢুকবেন না।
শনিবার নয়াপল্টনের একটি রেস্তোরাঁয় জিয়া মঞ্চের ঢাকা বিভাগীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এ প্রশ্ন তোলেন।
গয়েশ্বর রায় বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মতো টাকা লুট করে পাচার করছে। এ জন্য সাংবাদিকেরা সেখানে ঢুকতে পারছেন না। তিনি বলেন, গণমাধ্যমকর্মীরা চাকরি হারানোর ভয়ে আছেন। তাই অনেক সত্য অপ্রকাশিত থাকছে। দেশের অর্থনীতি যে অবস্থায় দাঁড়িয়েছে, কয়দিন পর মানুষ টের পাবে। কোষাগার খালি, ডলারের অভাবে ব্যবসায়ীরা এলসি খুলতে পারছেন না। শিল্পকারখানা বন্ধ হতে বসেছে। চাকরির বাজারে হাহাকার।
ভারতীয় পণ্য বর্জনের প্রসঙ্গ তুলে বিএনপির এই নেতা বলেন, ভারতের পণ্য বয়কটের কথা বলব না। তবে আগে নিজেদের স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করতে হবে ভারতের পণ্য ক্রয় করার আগে। কেননা, তাদের ৫২৭টি পণ্য ইউরোপ নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। পাশাপাশি দেশের জন্য ক্ষতিকর আওয়ামী লীগকেও বর্জন করতে হবে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সমালোচনা করে গয়েশ্বর রায় বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় ওবায়দুল কাদেররা কোথায় ছিলেন। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগে মুক্তিযোদ্ধা নেই, সেটা বলা যাবে না। তবে যারা আছেন, সবাই প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আওয়ামী লীগ ফেরিওয়ালার মতো বিক্রি করছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালামের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক–বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী, সহসাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান, জিয়া মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক ফয়েজুল্লা ইকবাল, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবু তালেব প্রমুখ।

রাষ্ট্রায়ত্ত প্রধান চার ব্যাংকের রেমিট্যান্সের বাজারে ধ্বস
রেমিট্যান্স বাজারে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর এক-চতুর্থাংশের বেশি নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে।সে বাজার হাতছাড়া হতে হতে এখন ১০ শতাংশের ঘরে নেমে এসেছে। সোনালী, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স প্রবাহের অবস্থা একেবারেই নাজুক। তুলনামূলক ভালো অবস্থানে আছে কেবল জনতা ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গত পাঁচ বছরের রেমিট্যান্স প্রবাহের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০২০ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ৫৫৮ কোটি ৮২ লাখ ডলার, যা ছিল মোট রেমিট্যান্সের ২৫ দশমিক ৭০ শতাংশ। এর পর থেকে এ অংশীদারত্ব ক্রমেই কমেছে। ২০২১ সালে ২২ দশমিক শূন্য ৩, ২০২২ সালে ১৭ দশমিক ১১ শতাংশ রেমিট্যান্স দেশে আনে রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক। ২০২৩ সালে এ অংশীদারত্ব মাত্র ১২ দশমিক ১৭ শতাংশে নেমে আসে। চলতি বছরের প্রথম চার মাসে রেমিট্যান্সের মাত্র ১০ দশমিক ৪৭ শতাংশ এসেছে রাষ্ট্রায়ত্ত এসব ব্যাংকের মাধ্যমে।

ডলারের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঘোষিত দরে রেমিট্যান্স আনতে গিয়ে এ বিপর্যয় ঘটেছে বলে দাবি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের। যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তাদের ভাষ্যমতে, প্রতিযোগিতামূলক মনোভাবের অভাবেই ব্যাংকগুলো রেমিট্যান্সের বাজারে তাদের অবস্থান হারিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তার বক্তব্য হলো রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের কর্মকর্তারা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ঘোষিত দরে ডলার পাওয়ার আশায় বসে ছিলেন। এ কারণে তারা রেমিট্যান্সের বাজার হারিয়েছেন। রেমিট্যান্স আনার ক্ষেত্রে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা ছিল। কিন্তু রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রতিযোগী মনোভাবের ছিটেফোঁটাও ছিল না।
সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে ২০২০ পঞ্জিকাবর্ষে দেশে মোট রেমিট্যান্স এসেছিল ১৪৩ কোটি ৭৫ লাখ ডলার। অর্থাৎ ওই বছর ব্যাংকটির মাধ্যমে প্রতি মাসে গড়ে রেমিট্যান্স এসেছিল প্রায় ১২ কোটি ডলার। এর পর থেকে ব্যাংকটির মাধ্যমে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমতে থাকে। ২০২১ সালে ১ হাজার ৪০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স আসার পর ২০২২ সালে তা ১০৮ কোটিতে নেমে আসে। ২০২৩ সালে তা আরো কমে নেমে আসে মাত্র ৫৮ কোটি ডলারে। আর চলতি ২০২৪ সালের প্রথম চার মাসে (জানুয়ারি-এপ্রিল) মোট ১০ কোটি ৪৭ লাখ ডলার রেমিট্যান্স আনতে পেরেছে ব্যাংকটি। সে অনুযায়ী ব্যাংকটির মাধ্যমে এখন প্রতি মাসে গড়ে রেমিট্যান্স আসছে মাত্র ২ কোটি ৬১ লাখ ডলার। মাসভিত্তিক গড় বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২০ সালের তুলনায় ব্যাংকটিতে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে ৭৮ শতাংশের বেশি।

বাংলাদেশের শ্রমবাজারে অশনি সঙ্কেত
মধ্যপ্রাচ্য ও আসিয়ানভুক্ত কয়েকটি দেশে হঠাৎ করে কর্মী যাওয়ার হার কমে যাওয়ায় বৈদেশিক শ্রমবাজারকে ‘অশনি সঙ্কেত’ হিসাবে দেখছেন এই পেশার সাথে সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক ও বিশ্লেষকরা।
ইতোমধ্যে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ শ্রমবাজারগুলোর মধ্যে ওমান এখনো বন্ধ হয়ে আছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত ও দুবাইয়ে কর্মসংস্থান ভিসায় কর্মী যাওয়া বন্ধ হওয়ার কারণে দিন দিন কমছে বিদেশ গমনে ইচ্ছুকদের হার। এর সাথে নতুন করে মালয়েশিয়া সরকারের ইচ্ছানুযায়ী বাংলাদেশসহ বিদেশী শ্রমিকদের নামে কোটা দেয়া বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হওয়ায় বাংলাদেশের দ্বিতীয় ও সম্ভাবনাময় শ্রমবাজারটি অনেক হুমকির মুখে পড়েছে। আগামী ৩১ মে এর মধ্যে বর্তমান কোটার আওতায় মালয়েশিয়াগামী কর্মীদের প্রবেশের উপর যে বাধ্যবাধকতা রয়েছে সেটি জানিয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে জরুরি বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে।
জনস্বার্থে প্রকাশিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মালয়েশিয়ান সরকার বাংলাদেশসহ ১৪টি কর্মী প্রেরণকারী দেশ থেকে আগামী ৩১ মে এর মধ্যে মালয়েশিয়ায় প্রবেশের বাধ্যবাধকতা আরোপ করেছে। এ অবস্থায় মালয়েশিয়াগামী শ্রমিকদেরকে মালয়েশিয়া সরকার কর্তৃক প্রদত্ত ই ভিসা, জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর বহির্গমন ছাড়পত্র এবং এয়ারলাইন্সের ভ্রমণের টিকিটসহ সব ডকুমেন্টের সঠিকতা যাচাই-বাছাই পূর্বক মালয়েশিয়ায় যাওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
গতকাল জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, ২০২৪ সালের বিদেশগামীদের পরিসংখ্যানে জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তথ্য দেয়া আছে। নিয়ম অনুযায়ী এপ্রিল মাসের বিদেশগামীদের পরিসংখ্যানও স্ক্রিনে দেয়ার কথা। কিন্তু গতকাল মে মাসের ১২ তারিখ অতিবাহিত হলেও সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে এই তথ্যের আপডেট পাওয়া যায়নি। তাই গতকাল পর্যন্ত কত শ্রমিক বিদেশে গিয়েছেন তা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ফোন করেও পাওয়া যায়নি। জানুয়ারি থেকে মার্চ ২০২৪, পর্যন্ত বিদেশে কর্মী গিয়েছে ২ লাখ ৩৬ হাজার ৮৩৭ জন। অথচ ২০২৩ সালের এই সময়ে বাংলাদেশ থেকে ৩ লাখ ২৫ হাজারের মতো কর্মী বিদেশে গেছে এবং বছর শেষে রেকর্ড পরিমাণ ১৩ লাখেরও বেশি কর্মী পাড়ি জমিয়েছিলেন।
গত বছরের তুলনায় চলতি বছর বাংলাদেশের ৩টি গুরুত্বপূর্ণ শ্রমবাজারের উপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। এর মধ্যে ওমানে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে শুধু ৩০০ শ্রমিক যাওয়ার পর আর কোনো শ্রমিক যায়নি। ওমানের ঢাকার দূতাবাস বাংলাদেশ থেকে আপাতত শ্রমিক না নেয়ার ঘোষণার কথা সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছিল। এর পর থেকে দেশটিতে কর্মী যাওয়া সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে আছে। অথচ ২০২৩ সালে ওই দেশে ১ লাখ ২৭ হাজারের বেশি কর্মী পাড়ি জমিয়েছিলেন।
শুধু ওমান নয় মধ্যপ্রাচ্যর আরেক গুরুত্বপূর্ণ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাত ও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
২০২৩ সালে দেশটিতে ৯৮ হাজার ৪২২ জন শ্রমিক পাড়ি জমানোর তথ্য পরিসংখ্যানে উল্লেখ রয়েছে। আর চলতি বছরের প্রথম ৩ মাসে সেখানে গিয়েছে ২২ হাজার ৭৬০ জন। অথচ গত বছরের এই সময়ে ২৭ হাজারের বেশি কর্মী গিয়েছিল।
বর্তমানে দেশটিতে কর্মসংস্থান ভিসায় কর্মী যাওয়ার হার অনেক কমেছে। অথচ এই শ্রমবাজারে ভিজিট ভিসায় দুই লাখ কর্মী পাড়ি দিয়েছিল বলে বিএমইটির পরিসংখ্যানের হিসাবে রয়েছে। ওমান আর দুবাই নয় গুরুত্বপূর্ণ আরেক শ্রমবাজার মালয়েশিয়া সরকারও নতুন কোটা দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে গুরুত্বপূর্ণ ৩ শ্রমবাজারে শ্রমিক যাওয়ার হার তুলনামূলক অনেক কমেছে। ২০২৩ সালে এই তিন শ্রমবাজারে ৬ লাখের মতো কর্মী গিয়েছিল। এবারের হিসাব একেবারে ভিন্ন।
যদিও প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় চলতি বছর ১৫ লাখ কর্মী যাওয়ার টার্গেট নির্ধারণ করেছে। জনশক্তি ব্যবসায়ীরা বলছেন, গতানুগতিক শ্রমবাজার মালয়েশিয়া,ওমান ও দুবাইয়ে এ বছর কর্মী কম যাওয়ায় আমরা শঙ্কিত। নতুন শ্রমবাজারে লোক পাঠাবো, সেখানেও নানা আইনি বাধ্যবাধকতা। তাহলে আমরা কোথায় ব্যবসা করবো? ব্যবসা নেই আমাদের। লিবিয়ার মার্কেটও জটিলতায় আছে। আসলে এখন এই সেক্টরে অশনি সঙ্কেত দেখতে পাচ্ছি।
এক প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, স্মার্ট কার্ড দেয়া নিয়ে বিএমইটিতে ঘুষ লেনদেন বেশি হচ্ছে। সেখানে মনিটরিং বাড়ালে বিদেশে শ্রমিক যাওয়ার গতি বাড়বে কমবে অভিবাসন ব্যয়ও। একই সাথে বিদেশের বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোকে নতুন শ্রমবাজার খুঁজতে আরো বেশি তৎপর হওয়ার অনুরোধ তাদের।
