যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত হওয়ার ঝুঁকি নিয়েই বিক্ষোভে বিদেশি শিক্ষার্থীরা
নিজস্ব প্রতিবেদক: Kanak Sarwarপ্রকাশ: রবিবার, ৫ মে, ২০২৪ এ ১২:০০ AM

যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহমুদ খলিল। ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের অভিযান তার জীবনের সঙ্গেও জড়িত। কারণ ২৯ বছর বয়সী এই তরুণ নিজেও একজন ফিলিস্তিনি। শরণার্থী হিসেব বেড়ে উঠেছেন সিরিয়ায়। তার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যখন যুদ্ধবিরোধী কর্মসূচি শুরু হয়েছিল, তিনিও যোগ দিতে চেয়েছিলেন। তবে তার মনে একটা ভয় কাজ করছিল।
যে দোটানার মধ্যে খলিল পড়েছিলেন, তা যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে সাধারণ একটি বিষয়। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন এফ-১ শিক্ষার্থী ভিসায়। এই ভিসার আওতায় তিনি কত দিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকতে পারবেন, তা নির্ভর করে তার বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যত দিন তাকে নিয়মিত ছাত্র হিসেবে তালিকাভুক্ত করে রাখবে, তত দিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকা নিয়ে সমস্যায় পড়বেন না তিনি।
কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব শিক্ষার্থী ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন, তাদের অনেককেই বহিষ্কারসহ নানারকম শাস্তির মুখে পড়তে হয়েছে। এমন কোনো সাজা পেলে খলিলের ছাত্রত্ব ঝুঁকির মুখে পড়তে পারতো। তিনি বলেন, ‘(বিক্ষোভের) শুরু থেকেই আমি মানুষ ও গণমাধ্যমের চোখের আড়ালে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। বড় ঝুঁকি আছে-এমন কোনো কিছুতে নিজেকে জড়াতাম না।’
সরাসরি ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ বা ক্যাম্পাসে তাঁবু গেড়ে বসার বদলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ছাত্রসংগঠনের হয়ে মধ্যস্থতাকারীর কাজ শুরু করেন খলিল। ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে চাপ দিয়ে যাচ্ছে সংগঠনটি। খলিলের ভাষ্যমতে, এর বেশি কিছু করার সুযোগ তার ছিল না।
যেসব বিদেশি শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রে থাকার জন্য শিক্ষাসংক্রান্ত ভিসার ওপর নির্ভর করেন, তাদের জন্য সাময়িক বহিষ্কারও গুরুতর পরিণতি ডেকে আনতে পারে। খলিল বলেন, তিনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের খুব কাছে থেকে কাজ করেছেন, যেন নিজের কাজকর্মের জন্য তাকে কোনো সমস্যায় পড়তে না হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের হর্তাকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে তার মনেও হয়েছিল যে হয়তো তিনি সাজার মুখে পড়বেন না। এরপরও গত ৩০ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়ে দেয় যে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। অভিযোগ-তিনি নাকি বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন। খলিল বলেন, ‘আমি হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম। এটা এতটা উদ্ভট যে তারা এমন একজনকে বহিষ্কার করল, যে কিনা মধ্যস্থতার কাজ করছিল।’
আইনি বিপদ
বহিষ্কারের একদিন বাদে খলিলের কাছে একটি ই-মেইল পাঠায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তিন বাক্যের ওই মেইলে বলা হয়, বিভিন্ন নথিপত্র ও প্রমাণাদি পর্যালোচনা করে তার ‘অন্তর্র্বর্তী বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার’ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে ফোন করে এই ‘ভুলের’ জন্য খলিলের কাছে ক্ষমাও চাওয়া হয়।
তবে আইনবিশেষজ্ঞ ও নাগরিক অধিকার নিয়ে কাজ করা আইনজীবীরা এর মধ্যেও শঙ্কা দেখছেন। তাদের ভাষ্যমতে, যেসব বিদেশি শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রে থাকার জন্য শিক্ষাসংক্রান্ত ভিসার ওপর নির্ভর করেন, তাদের জন্য সাময়িক এই বহিষ্কারও গুরুতর পরিণতি ডেকে আনতে পারে।
নিউইয়র্কের সিটি ইউনিভার্সিটির ‘ক্রিয়েটিং ল এনফোর্সমেন্ট অ্যাকাউন্টিবিলিটি অ্যান্ড রেসপনসিবলিটি’ প্রকল্পের সহপ্রতিষ্ঠাতা নাজ আহমেদ বলেন, শিক্ষার্থী ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করা কেউ যদি তার বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে আর তালিকাভুক্ত না থাকেন, তখন ওই বিশ্ববিদ্যালয়কে বিষয়টি ২১ দিনের মধ্যে স্বরাষ্ট্র দফতরকে (ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি) জানাতে হয়।
স্বরাষ্ট্র দফতরের কাছে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমন তথ্য যাওয়ার পর ওই শিক্ষার্থীকে যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করতে হয়। আর তা না করলে ঝুঁকি থেকে যায়, কখন তাকে দেশটি থেকে বিতাড়িত করা হবে। নাজ আহমেদ বলেন, এমনটি হলে ওই শিক্ষার্থী যদি অন্য কোনো সুযোগ-সুবিধার জন্য ভবিষ্যতে আবার আবেদন করতে চান, তখন তার ওপর প্রভাব পড়তে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করা বিদেশিরাও দেশটির নাগরিকদের মতো অনেক অধিকার ভোগ করে থাকেন। যেমন বাকস্বাধীনতার কথাই বলা চলে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্যাট্রিয়ট আইনের মতো কিছু আইন এসব অধিকারও সীমিত করে দিতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে নাইন-ইলেভেন হামলার পর এই আইন পাস করা হয়েছিল।
নাগরিক অধিকারবিষয়ক আইনজীবী ও নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এলিজাবেথ ওউইয়াংয়ের ভাষ্যমতে, প্যাট্রিয়ট আইনের মাধ্যমে বিক্ষোভ-সমাবেশকে ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ হিসেবে ব্যাখ্যা দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। আর এমন কোনো কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত যে কারো অভিবাসনে বাধা দেওয়ার ক্ষমতা সরকারকে দেওয়া হয়েছে।
Related News

নিউইয়র্কে বাংলাদেশ স্ট্রিট’ নামে সড়কের উদ্বোধন !
নিউইয়র্কের একটি সড়কের নাম করণ করা হলো বাংলাদেশের নামে। ‘বাংলাদেশ স্ট্রিট’ নামে এই সড়কটির নাম ফলক রবিবার উদ্বোধন করা হয়। জ্যাকসন হাইটসের এই সড়কের নাম করণ অনুষ্ঠানে বিপুল সংখ্যক প্রবাসীর পাশাপাশি স্থানীয়দের ভিড় জমে।
স্থানীয় সময় রবিবার দুপুর ২টায় বাংলাদেশ স্ট্রিটের নামফলক উম্মোচন করেন জ্যাকসন হাইটস ও এলমহার্স্ট এলাকার নবনির্বাচিত সিটি কাউন্সিলম্যান উপ-মহাদেশীয় বংশোদ্ভূত শেখর কৃষ্ণান।

এসময় জ্যাকসন হাইটস বাংলাদেশি বিজনেস অ্যাসোসিয়েশনের (জেবিবিএ) সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তা, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ স্ট্রিটের নামফলক উম্মোচন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নিউ ইয়র্কের কংগ্রেসওমেন গ্রেস মেং, অ্যাসেম্বলিওম্যান ক্যাটালিনা ক্রুজ, স্টিভেন রাঘাব, কাউন্সিল মেম্বার জেসিকা গঞ্জালেজ-রোজাস, অ্যাসেম্বলিম্যান স্টিভেন রাগা, কাউন্সিল মেম্বার লিন্ডা লি, জেবিবিএর বর্তমান সভাপতি হারুন ভূঁইয়া ও সাধারণ সম্পাদক ফাহাদ সোলায়মান, অপর জেবিবিএর সভাপতি গিয়াস আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক তারেক হাসান খানসহ শত শত বাংলাদেশি।

উল্লেখ্য, নিউ ইয়র্ক প্রবাসী বাংলাদেশিদের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি কাউন্সিলম্যানদের সাধারণ সভায় ‘বাংলাদেশ স্ট্রিট’ নামকরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণের উদ্যোগ নিলে পরে ৪৭-০ ভোটে তা পাস হয়। সেই থেকে জ্যাকসন হাইটসের ৩৭ এভিনিউয়ের ৭৩ স্ট্রিটের নামকরণ করা হয় ‘বাংলাদেশ স্ট্রিট’। বিলটির সিদ্ধান্ত নম্বর হলো- আইএনটি ৮৯৭।
নিউইয়র্কের বাংলাদেশি অধ্যুষিত জ্যাকসন হাইটসে ‘বাংলাদেশ’ নামে সড়ক করার জোর তৎপরতা চালান জেবিবিএর সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তারা।
জানা যায়, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি নিউ ইয়র্ক সিটির ১২৯টি স্ট্রিটের পুনর্নামকরণের বিলটি সভায় আলোচনায় আসে। এক এক করে ১২৯টি স্ট্রিটের নতুন নামকরণের প্রস্তাব শোনানো হয়। পাঁচ বরোতেই নতুন নামকরণ করা হয়েছে বিভিন্ন স্ট্রিটের বা এভিনিউয়ের। এসব নামকরণ করা হয়েছে বিভিন্ন কমিউনিটির নিজ দেশের বা বিশিষ্ট ব্যক্তির নামে। নিউ ইয়র্ক সিটিতে বাংলাদেশি প্রবাসীদের সবচেয়ে বড় ব্যবসাকেন্দ্র ও সাংস্কৃতিক প্রাণকেন্দ্র জ্যাকসন হাইটসের ৭৩ স্ট্রিটের এক ব্লকের নামকরণ করা হলো ‘বাংলাদেশ স্ট্রিট’।

ভারতের প্রভাবে নমনীয়তা হাস্যকর, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানে কোন পরিবর্তন নেই: ডনাল্ড লু
বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান অপরিবর্তিত থাকবে বলে জানিয়েছেন সদ্য ঢাকা সফর করে যাওয়া দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডনাল্ড লু। বুধবার মধ্যরাতে ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে দেশের একটি পত্রিকা এবং একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের এই অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন। সাক্ষাৎকারে ভারতের মধ্যস্থতা বা তাদের প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে ০৭ই জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান নরম করেছে, বিএনপি নেতাদের এমন অভিযোগও উড়িয়ে দেন, এমন দাবিকে হাস্যকর বলে মন্তব্য করেন তিনি। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে ভারতের চোখে দেখে বলে এ অঞ্চলে যে ধারণা বিদ্যমান সেটাও খণ্ডনের চেষ্টা করেন লু। বলেন, বাংলাদেশে নিজ স্বার্থ, নিজস্ব বিবেচনা বা দৃষ্টিকোণ দিয়ে দেখে যুক্তরাষ্ট্র। ভারত, চীন কিংবা রাশিয়ার স্বার্থের দৃষ্টিকোণ দিয়ে নয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশি বন্ধুদের সঙ্গে আমরা সরাসরি আলোচনা করি। তবে এটাও সত্য যে, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে আলোচনা হয় এ অঞ্চলের পরিস্থিতি নিয়ে। সেই আলোচনায় শ্রীলঙ্কা, নেপাল, মালদ্বীপ- কখনো কখনো বাংলাদেশ প্রসঙ্গও থাকে।
প্রথম আলো এবং ইনডিপেনডেন্ট টিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের জ্যেষ্ঠ এই কর্মকর্তা র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি, গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর ওপর নৃশংসতার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র বিক্ষোভ, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের ভবিষ্যৎ, এই অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন।সাক্ষাৎকারে তিনি কিছু বিষয় খোলাসা করে জানান।
৭ই জানুয়ারির নির্বাচনকে ঘিরে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে মতপার্থক্য তৈরি হয়েছিল, তা পাশে সরিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সামনে এগিয়ে যেতে চায়। এক প্রশ্নের জবাবে লু বলেন, নির্বাচনে সহিংসতা ও ভোটারদের ওপর বলপ্রয়োগ করায় আমরা পুলিশ, সরকারি ও বিরোধী দলের নেতাদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলাম। আমরা আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে অর্থপূর্ণ সংলাপে বসতে বলেছিলাম। আমরা সভা-সমাবেশ ও বাকস্বাধীনতার পক্ষে সোচ্চার ছিলাম। এটা খুবই স্বাভাবিক। সব অঞ্চলেই আমরা এমন করি। বাংলাদেশে এসব মূল্যবোধ বজায় রাখতে আমরা কাজ করে যাব।
তিনি বলেন, আমাদের সম্পর্কের মাঝে অনেক জটিল বিষয় রয়েছে। গত বছর নির্বাচন নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে অনেক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল, এটা তো এখন আর গোপন নয়। র্যাবের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আমরা কাজ করছি। আমরা সামগ্রিক মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করছি। ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়ন নিয়েও কথা বলেছি। বিষয়গুলো তো জটিল। যেমন শ্রম অধিকারের মতো বিষয়ে আমরা দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছি। এতে অগ্রগতি খুব ধীরগতির। এ ক্ষেত্রে অগ্রগতিতে সময় লাগে।
বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বলেছি, জটিল বিষয়ের পাশাপাশি আমরা সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্র খুঁজবো। ইতিবাচক অ্যাজেন্ডা নিয়ে কাজ করবো। যেমন যুক্তরাষ্ট্রে যদি বাংলাদেশের শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ানো হয়, ক্রমবর্ধমান হারে ব্যবসা ও বিনিয়োগ হয়, পরিবেশবান্ধব জ্বালানির জন্য পথ তৈরি করা যায়, যাতে বাংলাদেশের পরিবেশের উন্নতি হয় আর অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ত্বরান্বিত করা যায়; আমরা যদি এ বিষয়গুলো করতে পারি, তবে জটিল বিষয়গুলো সমাধানের পথ আমাদের জন্য সহজ হয়ে যাবে।
র্যাবের বিরুদ্ধে বিদ্যমান মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের কোনো অগ্রগতি আছে কি-না? জানতে চাইলে ডনাল্ড লু বলেন, র্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা এখনো বহাল আছে। এক বছর আগে বাংলাদেশ সফরের সময় র্যাবের বিষয়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনের প্রসঙ্গ তুলেছিলাম। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ গত বছর তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছিল, র্যাবের হাতে বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুম নাটকীয়ভাবে কমে গেছে। এটা বিরাট ঘটনা। এটা অবশ্যই ভালো অগ্রগতি উল্লেখ করেই বলতে চাই, আমাদের এখনো উদ্বেগ রয়ে গেছে। আমরা দেখছি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অন্য বিভাগের সদস্যরা এসব অপরাধ করে চলেছেন। র্যাবের অতীতের অপরাধের জবাবদিহি নিশ্চিত করা হচ্ছে কি না, সেটাও আমরা দেখতে চাই। এ বিষয়গুলো কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ। আমরা জানি যে বাংলাদেশ সরকারের (র্যাবের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার) প্রক্রিয়া নিয়ে ধৈর্যের অভাব আছে। গত বছর বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুম নাটকীয়ভাবে কমে যাওয়ার মাধ্যমে এটা প্রমাণিত যে, র্যাব মানবাধিকার লঙ্ঘন না করেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষার অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে পারে।
এক প্রশ্নের জবাবে লু বলেন, বাংলাদেশে মানবাধিকার নিয়ে সমস্যা দেখা দিলে আমরা সেটি নিয়ে কথা বলি। কারণ, বাংলাদেশ আমাদের সহযোগী। আমাদের কোনো সমস্যা দেখলেও বাংলাদেশ তা খোলামনে বলতে পারে। লু বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে বিক্ষোভ দমনকালে পুলিশের অতি উৎসাহী পদক্ষেপ থাকলে তা অবশ্যই তদন্তে ধরা পড়বে। পুলিশ অতি উৎসাহী কাজ করলে তাকে অবশ্যই বিচারের আওতায় আনা হবে। গণতন্ত্রে এটাই হয়।

বিচারের মুখোমুখি হচ্ছে বেতন না দেওয়া মালয়েশিয়ান কোম্পানিগুলো
মালয়েশিয়া এবার বাংলাদেশি কর্মীদের স্বার্থ রক্ষায় বেশ সোচ্চার হয়েছে। বিচারের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে বাংলাদেশি কর্মীদের বেতন না দেওয়া মালয়েশিয়ান কোম্পানি, মুলিয়াওন এনার্জি এসডিএন বিএইচডিকে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া মালয়েশিয়ায় মিছিল করা প্রায় সাত শতাধিক বাংলাদেশি কর্মীদের ক্ষতিপূরণ দিতে ব্যর্থ হওয়া এবং শ্রম আইন লঙ্ঘন করার দায়ে দেশটির ডেপুটি পাবলিক প্রসিকিউটর উক্ত কোম্পানির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন
এর আগে গত ৫ ফেব্রুয়ারি জাবাতান তেনাগা কেরজা সেমেনানজুং মালয়েশিয়া (জেটিকে) কর্মকর্তারা উক্ত কোম্পানির নিয়োগকর্তা ও কর্মচারীদের উপস্থিতিতে শ্রম আদালত ৭৩৩ জন বাংলাদেশি শ্রমিকের নিয়োগকর্তাকে ১ কোটি ৩৫ লাখ ৫৫৭ মিলিয়ন রিঙ্গিত বকেয়া বেতন পরিশোধ করার নির্দেশ দেন।
দেশটির অনলাইন, মালয় মেইল জানিয়েছে, চাকরির দিয়ে বাংলাদেশি কর্মীদের মালয়েশিয়ায় নিয়ে এসে অমানবিক পরিস্থিতিতে ফেলে দেশটির জোহর রাজ্যের পেঙ্গেরাংয়ের একটি কোম্পানি। মুলিয়াওন এনার্জি এসডিএন বিএইচডি নামের ওই কোম্পানিটি ভুয়া চাকরি দেখিয়ে সে দেশে কর্মী নিয়েছে। পরে মালয়েশিয়ার জোহর অঞ্চলের শ্রম আদালতে অভিযোগ দায়ের করলে অর্ধেক বেতন পরিশোধের শর্তে বিরোধ নিষ্পত্তি করতে রাজি হয়েছিল কোম্পানিটি।
এদিকে, গত বছরের অক্টোবর থেকে বেকার দিনযাপন করা এই কর্মীরা বাকি অর্ধেক বেতন কবে নাগাদ পাবে, সেই নিশ্চয়তা এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তবে ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তাদের কর্মসংস্থান নিশ্চিতের নির্দেশও দিয়েছিলেন আদালত।
কিছু মালয়েশিয়ান কোম্পানি বাংলাদেশি প্রবাসী কর্মীদের বেতন দিতে ব্যর্থ হলে এই বছরের শুরুতে ৭৩০ জনেরও বেশি বাংলাদেশি কর্মী দশটি দলে ভাগ হয়ে দেশটির ডিপার্টমেন্ট অব লেবারে অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে নিয়োগদানকারী কোম্পানিকে বেতনের বিষয়টি সুরহার নির্দেশ দেয় সংশ্লিষ্ট দপ্তর। সেই নির্দেশনা মোতাবেক প্রায় ১ মিলিয়ন রিঙ্গিত বাংলাদেশি কর্মীদের পাওয়ার কথা ছিলো কিন্তু এ পর্যন্ত কোনো টাকাই পরিশোধ করেনি কোম্পানির মালিক পক্ষ।
দেশটির লেবার ডিপার্টমেন্টের সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাতে গত বৃহস্পতিবার, কয়েকটি স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, অভিযোগকারীদের উপর আনীত অভিযোগের ভিত্তিতে ১০টি ফাইল খোলা হয়েছিলো, যার মধ্য থেকে ৬টি ফাইলের ব্যাপারে অগ্রগতি জানতে চেয়েছেন দেশটির ডেপুটি পাবলিক প্রসিকিউটর।
ডিরেক্টর-জেনারেল অফিসে এ কেইসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র দেশটির সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে যে, যে প্রক্রিয়ায় বিষয়গুলো এগোচ্ছে তাতে এটা নিশ্চিত যে, এই কোম্পানিগুলো শাস্তির মুখোমুখি হতে যাচ্ছে। তবে এ ব্যাপারে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো যোগাযোগ করলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি উক্ত কোম্পানি কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, দেশটির মানবসম্পদ মন্ত্রী স্টিভেন সিম গত ফেব্রুয়ারিতে ৭৩৩ বাংলাদেশি কর্মী এবং নিয়োগকারী ফার্মের মধ্যে মধ্যস্থতার নির্দেশকে একটি ল্যান্ডমার্ক কেস হিসেবে বর্ণনা করে বিদেশি কর্মী নিয়োগ ব্যবস্থা থেকে লাভবান শিল্পগুলোকে একটি শক্তিশালী বার্তা দেবে বলে আশা করেছিলেন। সেই সময় তিনি আরো বলেছিলেন, নিয়োগকর্তারা যদি দোষী সাব্যস্ত হন তবে তাদের ব্লক লিস্টেড করা হবে এবং বিদেশি শ্রমিক নিয়োগে তাদের কোটা বাতিল করা হবে।
এদিকে, মাইগ্রান্ট রাইটসের কর্মীরা এ বিবৃতির সমালোচনা করে বলেছিলেন যে, মধ্যস্থতার এ নির্দেশ বিদেশি কর্মী নিয়োগের নামে মানব পাচারের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় শক্তিশালী পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে যথেষ্ট নয়।
তবে, মানব পাচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যৎসামান্য চেষ্টার জন্য মালয়েশিয়া বরাবরই সমালোচিত হয়ে আসছে।

পোপের আমন্ত্রণে মানব ভ্রাতৃত্বের জন্য দ্বিতীয় বিশ্বসভায় ড. ইউনূস
ভ্যাটিকান সিটিতে আয়োজিত মানব ভ্রাতৃত্বের জন্য দ্বিতীয় বিশ্বসভার জন্য জড়ো হয়েছিলেন,ত্রিশজন নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী, বিজ্ঞানী, অর্থনীতিবিদ, মেয়র, ডাক্তার, ব্যবস্থাপক কর্মী, ক্রীড়া চ্যাম্পিয়ন এবং সাধারণ নাগরিক! ১০ থেকে ১১ই মে পরিবেশ, শিক্ষা, ব্যবসা, কৃষি, মিডিয়া এবং স্বাস্থ্যে মানব ভ্রাতৃত্বের প্রচারের উপায় নিয়ে আলোচনা করতে বিশ্বসভায় দু’টি গুরুত্বপূর্ণ অধিবেশনে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং শান্তিতে নোবেল বিজয়ী গুয়েতেমালা থেকে ড. রিগোবার্তা মেনচু তুম সভাপতিত্ব করেন।
গোলটেবিল আলোচনার সূচনা করে ভ্যাটিকানের সেক্রেটারি অফ স্টেট কার্ডিনাল পিয়েত্রো প্যারোলিন বলেন, মানুষ যখন শান্তিকে অসম্মান করে এবং যুদ্ধ চালায়, তারা নিজেদের জন্য এমন একটি দিক নির্ধারণ করে যা সৃষ্টির বিরোধিতা করে। এবং মানুষকে হত্যা করে তারা কেবল অন্যদের মর্যাদাকে আঘাত করে না বরং নিজেদেরও সম্মানহানি করে।

অনুষ্ঠানের শান্তি গোলটেবিল বৈঠক থেকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণায় গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি, হত্যা বন্ধ করতে এবং মানবিক সহায়তার নিরাপদ ও অনিয়ন্ত্রিত প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার জন্য আহ্বান জানানো হয়।উল্লেখ করা হয়েছে, আমরা আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়কে একটি ইসরাইল এবং একটি ফিলিস্তিনের দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের পাশাপাশি জেরুজালেম শহরের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে নিশ্চিত বিশেষ মর্যাদাকে দৃঢ়তার সঙ্গে অনুসরণ করার আহ্বান জানাচ্ছি যাতে ইসরাইলি এবং ফিলিস্তিনিরা অবশেষে শান্তি এবং নিরাপত্তায় বসবাস করতে পারে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস মন্তব্য করেন যে, অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাঠামো তৈরির সময় মানুষ নিজেদের সম্পর্কে যেভাবে চিন্তা করে তা মানবতার জন্য অস্ত্রের চেয়েও বেশি বড় হুমকি। আমাদের ভাগ করে নেয়া এবং যত্ন নেয়ার মানবিক মূল্যবোধের সঙ্গে মানুষ হিসেবে নিজেদেরকে নতুন করে আবিষ্কার করতে হবে এবং আমাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাঠামোর ভিত্তি তৈরি করতে হবে যা তিনটি শূন্যের একটি নতুন সভ্যতা-শূন্য বিশ্ব উষ্ণায়ন, শূন্য সম্পদ কেন্দ্রীয়করণ এবং শূন্য বেকারত্ব তৈরি করতে নিজেদেরকে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করে। এটা আমাদের করতে হবে আমাদের অর্থনৈতিক কাঠামোতে সামাজিক ব্যবসার ধারণা এবং অনুশীলনকে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করার মাধ্যমে। ড. ইউনূস বিশেষ করে বর্তমান সভ্যতার ‘মুনাফা সর্বোচ্চকরণ’ নীতি যার মাধ্যমে একটি ক্রমাগত প্রক্রিয়া হিসেবে মানুষকে ‘চাকরি সন্ধানকারী’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তার কারণে মুষ্টিমেয় মুনাফা অর্জনকারীদের তাদের সম্পদ ক্রমাগতভাবে আকাশচুম্বী করে যাচ্ছে।
গুয়েতেমালান আদিবাসী ১৯৯২ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী রিগোবার্তা মেঞ্চু তুম বর্তমান সমাজের বস্তুগত, সামাজিক এবং আধ্যাত্মিক অবক্ষয়ের সমালোচনা করেন এবং জোর দিয়েছেন যে, সম্পূর্ণ মানুষ হওয়ার জন্য আমাদের আত্মাকে লালন করার মতো মানুষের প্রয়োজন। অংশগ্রহণকারীরা ১১ই মে একটি একান্ত সভায় পোপ ফ্রান্সিসের সঙ্গে দেখা করেন।
