আবারও হেফাজতে নিয়ে নারী হত্যা করেছে RAB
নিজস্ব প্রতিবেদক: Kanak Sarwarপ্রকাশ: শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪ এ ০৫:২৮ PM

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে র্যাবের হেফাজতে সুরাইয়া খাতুন (৫২) নামে এক নারী আসামির মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে তাকে ময়মনসিংহের নান্দাইল থানার সামনে থেকে আটক করে ভৈরব র্যাব ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। শুক্রবার সকাল ৭টায় তাকে ভৈরব স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনার ১২ ঘণ্টা পর জেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইসরাত জাহানের উপস্থিতিতে ওই নারীর মরদেহের সুরতাল রির্পোট তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ মর্গে পাঠানো হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বৃহস্পতিবার (১৬ মে) রাতে ময়মনসিংহের নান্দাইল থানার ভেড়ামারি গ্রামের রেখা আক্তার (২০) নামে এক গৃহবধূ হত্যা মামলার প্রধান আসামি গৃহবধূর স্বামী তাইজুল ইসলাম মিলন ও তার মা সুরাইয়া খাতুনকে আটক করেন ভৈরব র্যাব ক্যাম্পের সদস্যরা। পরে আটক দুইজনকে র্যাব হেফাজতে রাখা হয়। তারা ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল থানার চন্ডিপাশা ইউনিয়নের বরুনাকান্দি গ্রামের বাসিন্দা।

দেড় বছর আগে একই উপজেলার ভেড়ামারি গ্রামের কৃষক হাসিম উদ্দিনের মেয়ে রেখা আক্তারের সঙ্গে একই উপজেলার ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল থানার চন্ডিপাশা ইউনিয়নের বরুনাকান্দি গ্রামের আজিজুল ইসলামের ছেলে তাইজুল ইসলাম লিমনের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে তার স্বামী তাইজুল ইসলাম দুই লাখ টাকা যৌতুকের জন্য রেখাকে চাপ সৃষ্টি করেন। এরপর অটোরিকশা কিনতে রেখার পরিবার তার স্বামীকে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা দিলেও তিনি অটোরিকশা কেনেননি বলে রেখার পরিবারের অভিযোগ। পরে আরও একলাখ টাকা যৌতুক দাবি করলে টাকা দিতে অস্বীকার করেন তারা।
এরইমধ্যে রেখা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। গত ২৬ এপ্রিল রাতে রেখাকে যৌতুকের টাকার জন্য তার স্বামী তাইজুল ইসলাম লিমন, শ্বশুর আজিজুল ইসলাম ও তার শাশুড়ি সুরাইয়া খাতুন নির্যাতন করেন। এরপর রাতেই তাকে আহত অবস্থায় পাশের উপজেলা ইশ্বরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ সময় তার স্বামী ও শাশুড়ি হাসপাতালে মরদেহ রেখে পালিয়ে গেলেও শ্বশুর আজিজুল ইসলামকে হাসপাতালের কর্মচারীরা আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন।
এদিন শ্বশুরবাড়ির লোকজন প্রচার করে রেখা ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। কিন্তু চিকিৎসক বলেন, তার গলায় ও শরীরে আঘাতের চিহ্ন আছে। খবর পেয়ে রেখার পরিবারের লোকজন মরদেহ হাসপাতাল থেকে নিয়ে ময়নাতদন্তের পর দাফন করে। কিন্তু থানায় তারা মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা না নিয়ে অপমৃত্যু মামলা করে। এরপর গত ২ মে রেখার মা রমিছা বেগম ময়মনসিংহের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালে তিনজনকে (স্বামি, শাশুড়ি ও শ্বশুর) অভিযুক্ত করে একটি মামলা করেন। আদালতের বিচারক মামলার শুনানি শেষে নান্দাইল থানার ওসিকে মামলাটি এফআইআর করে তদন্তের নির্দেশ দেন। গত ১৩ মে নান্দাইল থানায় মামলাটি রেকর্ড করা হয়। মামলাটি বর্তমানে তদন্ত করছেন নান্দাইল থানার এস আই নাজমুল হাসান।
এরইমধ্যে ভৈরব র্যাব ক্যাম্পের সদস্যরা বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় নান্দাইল থানায় গিয়ে পুলিশের মাধ্যমে শাশুড়ি সুরাইয়া খাতুন, স্বামী তাইজুল ইসলাম ও শ্বশুর আজিজুল ইসলামকে ডেকে আনেন। এ সময় শ্বশুরকে ছেড়ে দিয়ে দুই জনকে আটক করে ভৈরব র্যাব ক্যাম্পে নিয়ে আসেন গভীর রাতে। শুক্রবার সকালে মৃত অবস্থায় ভৈরবের হাসাপাতালে নিয়ে যান সুরাইয়াকে। রেখার স্বামী তাইজুল ইসলাম বর্তমানে র্যাবের হাতে আটক।
নিহত সুরাইয়া খাতুনের স্বামী আজিজুল ইসলাম ফোনে বলেন, আমার ছেলের বউ রেখা আক্তার ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেছে। তারপরও তার পরিবার মামলা করেছে। আমরা আইনিভাবে মোকাবিলা করবো। শুক্রবার রাতে নান্দাইল থানায় পুলিশ আমাদেরকে ডেকে এনে র্যাবের হাতে সুস্থ অবস্থায় আমার স্ত্রী ও ছেলেকে তুলে দিলো। খবর পেলাম রাতেই মারা গেছে আমার স্ত্রী। র্যাব নির্যাতন করে আমার স্ত্রীকে হত্যা করেছে। আমি এ বিষয়ে আদালতে মামলা করবো। আমি বিচার চাই।
ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বুলবুল আহমেদ জানান, শুক্রবার সকাল ৭টায় র্যাব সদস্যরা সুরাইয়া খাতুন নামের এক নারীকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। তাকে আনার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক বিনিত দাস তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, মৃত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে আনা হয়েছিল।
এ বিষয়ে ভৈরব র্যাব ক্যাম্পের কমান্ডার মো. ফাহিম ফয়সাল বলেন, হত্যা মামলার দুই জন আসামিকে গ্রেপ্তারের পর ভৈরব ক্যাম্পের হেফাজতে রাখা হয়। পরর্বতীতে হেফাজতে থাকা অবস্থায় রাতে অসুস্থ হয়ে পড়লে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই নারীর মৃত্যু হয়। তবে এই বিষয়ে বিস্তারিত আমাদের ময়মনসিংহ ক্যাম্পের সিও এসে প্রেস বিফ্রিং করবেন।
কিশোরগঞ্জ জেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইসরাত জাহান জানান, সন্ধ্যা সাতটার দিকে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে র্যাব হেফাজতে থাকা নারী আসামি সুরাইয়া বেগমের মরদেহের সুরতাল রিপোর্ট তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট আসার পর মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।
Related News

বাংলাদেশে পোশাকশ্রমিকেরা ভয় ও নিপীড়নের মধ্যে রয়েছেন: অ্যামনেস্টি
বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শ্রমিকেরা ভয় ও নিপীড়নের পরিবেশের মধ্যে রয়েছেন।তা ছাড়া রাষ্ট্রীয় মদদে শ্রমিকদের অধিকার দমন করা হচ্ছে। এখানে কারখানায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো দায়মুক্তি পেয়েছে। এ ঘটনা খতিয়েও দেখা হয় না। পয়লা মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসে এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
প্রতিবেদনে রানা প্লাজা ধস, আশুলিয়ার তাজরীন ফ্যাশনসে আগুনে শ্রমিকদের প্রাণহানি এবং ২০২৩ সালে পোশাকশ্রমিকদের আন্দোলনে দমন-পীড়নের ঘটনাগুলো তুলে ধরা হয়েছে।
অ্যামনেস্টি বলছে, গত মাসে রানা প্লাজা ধসের ১১ বছর পূর্ণ হয়েছে। ওই ঘটনায় ১ হাজার ১০০ জনের বেশি পোশাকশ্রমিক নিহত হয়েছিলেন। এর পাঁচ মাস আগে তাজরীন ফ্যাশনসের কারখানায় আগুন লেগে অন্তত ১১২ পোশাকশ্রমিকের প্রাণহানি ঘটে। দুটি ঘটনাই ঘটেছিল কর্মক্ষেত্রে নজরদারির অভাবে। এগুলো ব্যবসা সংশ্লিষ্ট মানবাধিকার লঙ্ঘনের জঘন্য উদাহরণ।

রানা প্লাজা ও তাজরীন ফ্যাশনসের ঘটনায় আইনি সহায়তা দেওয়া সংগঠন বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) ও অন্যান্য এনজিও একাধিক ক্ষতিপূরণের মামলা করেছিল। তবে ১১ বছর পেরিয়ে গেলেও সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ এবং ভবন ও কারখানামালিকদের বিরুদ্ধে করা মামলাগুলোর সুরাহা হয়নি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের পোশাকশ্রমিকদের খুবই স্বল্প মজুরি দেওয়া হয়। ন্যায়বিচার, মজুরি বৃদ্ধি, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও কর্মক্ষেত্রের উন্নত পরিবেশের দাবিতে সোচ্চার হলেই তারা হয়রানি, ভয়ভীতি ও সহিংসতার মতো নানা বাধার মুখে পড়েন।
যেমন ২০২৩ সালের জুনে বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের (বিজিআইডব্লিউএফ) গাজীপুর শাখার সভাপতি শহিদুল ইসলাম পোশাক শ্রমিকদের বকেয়া বেতন আদায়ের চেষ্টা করলে হামলায় নিহত হন। একই বছরের অক্টোবর-নভেম্বরে ন্যূনতম মজুরির দাবিতে আন্দোলনের সময় আরও অন্তত চারজন পোশাকশ্রমিক নিহত হন।

অ্যামনেস্টির হিসাবে, ২০২৩ সালের আন্দোলনের পর থেকে পোশাকশ্রমিকদের বিরুদ্ধে অন্তত ৩৫টি মামলা করা হয়েছে। এতে ১৬১ পোশাকশ্রমিকসহ ৩৫ হাজার ৯০০ থেকে ৪৪ হাজার ৪৫০ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। ৩৫টি মামলার মধ্যে ২৫টি এমন সব পোশাক কারখানা করেছে, যেগুলো বিশ্বের বড় বড় ফ্যাশন ব্র্যান্ডের জন্য পোশাক তৈরি করে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের উপপরিচালক নাদিয়া রহমান বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের যথেষ্ট পরিমাণ ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে অ্যামনেস্টি। একই সঙ্গে অবিলম্বে শ্রমিক অধিকার দমন বন্ধ এবং শ্রমিকদের মতপ্রকাশ ও সমাবেশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে।

সাগর রুনি হত্যার তদন্ত প্রতিবেদন ১০৯ বারের মতো পেছালো !
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ ১০৯ বারের মতো পিছিয়ে আগামী ৪ঠা আগস্ট দিন ধার্য করেছেন আদালত।
রোববার মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য ছিল। এদিন তদন্তকারী সংস্থা র্যাব প্রতিবেদন দাখিল করতে না পারায় ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুল হক প্রতিবেদনের জন্য নতুন এদিন ধার্য করেন।
২০১২ সালের ১১ই ফেব্রুয়ারি মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সারোয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনিকে হত্যা করা হয়। এরপর নিহত রুনির ভাই নওশের আলম রোমান শেরেবাংলা নগর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। শেরেবাংলা নগর পুলিশ ও পুলিশের গোয়েন্দা শাখার পর ২০১২ সালের ১৮ই এপ্রিল র্যাবকে এ মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়। হত্যাকাণ্ডের একযুগ পার হয়ে গেলেও মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি র্যাব।
আলোচিত এ হত্যা মামলায় রুনির বন্ধু তানভীর রহমানসহ মোট এজাহারভুক্ত আসামি ৮ জন। অন্য আসামিরা হলেন- বাড়ির নিরাপত্তারক্ষী এনাম আহমেদ ওরফে হুমায়ুন কবির, রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মিন্টু ওরফে বারগিরা মিন্টু ওরফে মাসুম মিন্টু, কামরুল হাসান অরুণ, পলাশ রুদ্র পাল ও আবু সাঈদ।
